রক্তরাঙা শিমুল বাগান -সিলেট,সুনামগঞ্জ সীমান্তে ভ্রমণ গাইড

SaiF UddiN


সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ শিমুলবাগান। লাউরের গড়, তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ,

ফাল্গুন আর বসন্ত এলেই মনে পড়ে যায় শিমুল আর পলাশ গাছের দৃশ্য। সত্যিই বাংলার বসন্তকে লাল তুলির আচরে যেন রঙিন করে সবার মনকেও রাঙিয়ে তোলে শিমুল ফুল। 
এমনই একটি বিশাল শিমুল গাছের বাগান তৈরি করেছেন সিলেটের মরহুম জয়নুল আবেদীন সাহেব। সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুরের জাদুকাটা নদীর খুব কাছেই ১০০ বিঘে জমির উপর তিনি স্থাপন করেছেন এই শিমুলবাগানটি। টিলা ও ছোট ছোট পাহাড়ের সমন্বয়ে গঠিত এলাকাটি ঠিক ভারতের পাহাড়ি রাজ্য মেঘালয়ের পাদদেশেই অবস্থিত। 
ফাল্গুন চৈত্র মাসে এখানে এসে সারি সারি শিমুল গাছ আর গাছভর্তি লালে লাল শিমুল ফুল দেখে যে কেউ মোহিত হয়ে যাবে। স্বপ্নের মত সুন্দর মনে হবে বাগানটিকে। সারা পৃথিবীর বসন্ত ঋতুর সব সুন্দর যেন এখানেই ধরা দিয়েছে। সারি সারি এই শিমুল গাছের বাগানে বসন্তের বিকেলে 
একটু খানি ঘুরে বেড়ালে কোন সাধই যেন আর অপূর্ণ থাকবে না। এই বাগানের পাশেই বারিক্কা টিলার উপরে উঠে জাদুকাটা নদীর যে অপরূপ দৃশ্য দেখা যায় সেটিও সারাজীবন স্মৃতির পটে গেঁথে রাখার মতই সুন্দর। 
বিশাল এই শিমুলের বাগান শুধু বাংলাদেশেরই নয় সারা পৃথিবীর একটি অন্যতম বড় শিমুলবাগান।
সুনামগঞ্জ শহর থেকে মোটরবাইক,সিএনজি অটো কিম্বা মাহিন্দ্রা জিপে করে জাদুকাটা নদীর পাড়ে বারিক্কা টিলায় যাবার পথেই এই শিমুলবাগানের অবস্থান। নিকটস্থ তাহিরপুরের সরকারী বাংলোতে রাত্রিযাপনের ব্যাবস্থাও রয়েছে।

১৬ বছর আগে বাদাঘাট (উত্তর) ইউনিয়ন পরিষদের তখনকার চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন নিজের জমিতে এই বাগান গড়ে তোলেন। লাউরের গড়, তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ,


আজ কোন ভূমিকায় যাব না... সরাসরি চলুন জেনে নেই কম খরচে শিমুল বাগান ঘুরে আসার ট্রিপ প্ল্যান -

রাতের ট্রেনে (৯.৫০ এ ছাড়ে ) কমলাপুর থেকে চলে যাবেন সিলেট। শোভন চেয়ার ভাড়া নিবে ৩২০ টাকা। সিট পেতে হলে অবশ্যই কস্ট করে ২-১ দিন আগে যেয়ে টিকেট কেটে আনতে হবে। অনলাইনেও সম্ভবত কাটা যায়। ভোর বেলা নামিয়ে দিবে সিলেট। একটা রিকশা নিয়ে (ভাড়া ৩০ টাকা) ক্বীন ব্রীজ ক্রস করে পানসী/পাচ ভাই / ভোজনবাড়ি (এক ই জায়গায় অবস্থিত) রেস্টুরেন্টে প্রাতরাশ সেরে ভরপেট মজাদার নাস্তা খাবেন। আরেকটা রিকশা নিয়ে চলে যাবেন আম্বরখানা। রেস্টুরেন্ট থেকে নিবে ১৫ টাকা। আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সুনামগঞ্জ এর বাস যেখান থেকে ছাড়ে সে পর্যন্ত শেয়ারে সি এন জি যায় । ভাড়া জনপ্রতি ১৫ টাকা। বাসস্ট্যান্ড এর জায়গার নাম কুমারগাও। সি এন জি থেকে নেমে হাতের ডানে টিকেট কাউন্টার আছে সুনামগঞ্জ গামী বিরতিহীন বাসের। ভাড়া ৯০ টাকা। সময় লাগবে দেড় থেকে ২ ঘন্টা। সুনামগঞ্জ নেমে নতুন ব্রীজের ওই পাড়ে মোটরবাইক দাঁড়িয়ে থাকে অনেক। কথা বলে বারেক টিলা নদীর এই পাড় পর্যন্ত ভাড়া নিবে ২০০ টাকা।( দামাদামি করে ১৫০ তেও নাকি যাওয়া সম্ভব!) একটাতে ২ জন চড়া যায়। জনপ্রতি তাহলে পরল ১০০ করে। জাদুকাটা নদীর সামনে নামিয়ে দিবে। ৫ টাকা দিয়ে খেয়া অতিক্রম করে ওইপাড়ে গেলেই বারেক টিলা , যা থেকে সুন্দর পুরো জাদুকাটা নদী দেখা যায়। পাশেই সীমান্ত ,তাই উত্তর দিকে বেশীদূর না যাওয়াই ভাল। বারেক টিলা থেকে নেমে চায়ের দোকান আছে কিছু ,তাদের জিজ্ঞেস করলেই ছবির এই জায়গা ,শিমুল বাগান যাওয়ার পথ দেখিয়ে দিবে। বিকেল পর্যন্ত হেটে হেটে ঘুরে ,ছবি তুলে আবার বারেক টিলার সামনে থেকে মোটরবাইক নিয়ে সুনামগঞ্জ ফেরত। সুনামগঞ্জ থেকে সরাসরি বাস আছে ,চাইলে রাতের বাসে করে ডিনার সেরে ঢাকা ফেরা সম্ভব, বা কম পয়সায় আসতে চাইলে ও আমার মত বাসে হালকা এলারজি থাকলে আবার সিলেট এসে ট্রেনে করেও ঢাকা ফেরা সম্ভব।

আর যাদের ট্রেনে যেতে আপত্তি তারা সরাসরি সুনামগঞ্জের বাসে যেতে ও আসতে পারেন। ভাড়া ৫০০ টাকা।

ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে মামুন ও শ্যামলি পরিবহণ এবং মহাখালী থেকে এনা পরিবহণ সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এগুলো নন এসি বাস। ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জে নন এসি বাসে গেলে ৫৫০ টাকার টিকেট কাটতে হবে। সুনামগঞ্জে পৌঁছাতে সময় লাগবে ৬ ঘন্টা। সুনামগঞ্জ থেকে সিএনজি অথবা মোটরসাইকেল ভাড়া করে বারেক টিলায় যেতে পারবেন। বারেক টিলা ঘোরার পর যেতে পারবেন শিমুল বাগানে। বারেকটিলার অপার সৌন্দর্য দেখে শিমুল বাগানের মোহনীয় মায়া ও ফুলের সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়াতে পারবেন। মনকে দিতে পারবেন প্রশান্তি। তবে মাথায় রাখবেন শিমুল বাগানের ফুটন্ত শিমুল ফুল কেবল বসন্ত ঋতুতেই দেখতে পারবেন। অন্য কোনো ঋতুতে গেলে ফুলের দেখা পাবেন না। পাখির কলতানও শোনা যাবে কিনা সন্দেহ।
পথের খোঁজ:
প্রথমেই যেতে হবে সুনামগঞ্জ। আপনি যে এলাকার বাসিন্দাই হোন না কেন বাসে চলে আসতে পারেন সুনামগঞ্জে। অথবা ট্রেনে সিলেট হয়ে, সিলেট থেকে বাসে আসতে পারেন সুনামগঞ্জ। সুনামগঞ্জ শহর থেকে বারিক টিলার জন্য বাইক ভাড়া নেবেন। এক বাইকে ২ জন ওঠা যায়। বাইকের ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা। বারিক টিলা থেকে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই শিমুল বাগান দেখিয়ে দেবে। 
 কোথায় থাকবেন:
বড়ছড়া বাজারে রেস্ট হাউজ আছে ২০০-৪০০ টাকায় থাকা যায়। বারেক টিলা পাড় হয়েই বড়ছড়া বাজার। চাইলে টেকেরঘাট থেকে হেঁটেও আসতে পারবেন বড়ছড়া বাজারে। এছাড়াও লেকের পাশে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি চুনা পাথরের কারখানা আছে তার গেস্ট হাউজে থাকতে পারবেন যদি খালি থাকে।
১. উপজেলা ডাকবাংলোর কেয়ারটেকার কৃপেশ দাস: ০১৭২৪৯৬৮১৬১
২. উপজেলা গেস্টহাউজের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব আনিসুল হককে অনুরোধ করতে হবে: ০১৭১৫১৭২২৩৮।
এছাড়া সুনামগঞ্জে ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকার মধ্যে থাকার জন্যে হোটেল ভাড়া পাবেন।

* একদিন ঘুরে যাদের পোষায় না ,তারা শিমুল বাগান ঘুরে আরেকটা মোটরবাইক নিয়ে তাহিরপুর উপজেলা চলে যেতে পারেন। সেখানে ডাক বাংলোতে অল্প খরচে থাকা যায়। যাবার পথে ট্যাকেরঘাট ,নীলাদ্রি লেক ও ঘুরে গেলেন। আবার তাহিরপুর রাতে থেকে ভোরবেলা মোটরবাইক বা ট্রলারে টাঙ্গুয়ার ভেতর পর্যন্ত ঘুরে আসতে পারেন। এখন প্রচুর অতিথি পাখি আছে হাওড়ে। পানি কম থাকলেও পাখি দেখে মন ভরবে।

* তাহিরপুর বা হাওড়ের আশে পাশে এলাকার রেস্তোরাঁয় গিয়ে পাখি খাওয়ার লোভ দেখালেও খাবেন না। মনে রাখবেন ,আমরা না খেলেও কিন্ত তারা আর পাখি শিকার করবে না।বেচতে না পারলে তাদের আর মেরে লাভ কি?! " অতিথি পাখি শিকার বন্ধ কর" টাইপ মানববন্ধন করা থেকে এটা হাজার গুনে কার্যকর তরিকা। 
* হাওড়ের মানুষ খুব ই সাধারন, সাধারন ভাবেই তাদের সাথে মিশুন ,আখেরে লাভ আপনার ই! 
* চিপ্স/ বিস্কুট/চক্লেট এর প্যাকেট ,খালি পানির বোতল ফেলে আসবেন না প্লিজ, দোহাই লাগে। ব্যাগের একটা পকেটে রেখে দিন। শহরে এসে ফেলুন ,হাওড়ে না।

* একদিনের এই ট্রিপে এইভাবে ২ জন গিয়ে ঘুরে আসলে সময় লাগবে ২ রাত-১ দিন। খরচ হবে সর্বোচ্চ ১৫০০ টাকা। ( ঢাকা সিলেট -যাওয়া আসা ট্রেনে)

এ সময় ভ্রমণপিপাসুরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে আসে এই বাগানে। লাউরের গড়, তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ,



রোদে ঝলমল করছে থোকা থোকা শিমুল ফুল। লাউরের গড়, তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ,



ফোটার অপেক্ষায় শিমুলের কলি। লাউরের গড়, তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ,


প্রায় ২ হাজার ৪০০ শতক জমিজুড়ে বিস্তৃত এই বাগান। লাউরের গড়, তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ,




শিমুল ফুল ছাড়া যেন ঋতুরাজ বসন্ত পরিপূর্ণতা পায় না। লাউরের গড়, তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ,

এ এলাকায় প্রায় তিন হাজার শিমুলগাছ লাগানো হয়েছিল। লাউরের গড়, তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ,


সবার ভ্রমন আনন্দময় আর নিরাপদ হোক।

Comments

  1. সুনামগন্জ থেকে বাইক ব্যতীত যাওয়ার কোন ব্যবস্হা নাই?

    ReplyDelete
    Replies
    1. bike e best.....
      bcoz the road is So Narrow & Zigzag....

      Delete

Post a Comment