SaiF UddiN


দ্বীপের মতো গ্রাম
কিংবদন্তিটা হলো, ৪০০ বছর আগের ইতিহাসে বেলাই বিলে কোনো গ্রামের অস্তিত্ব ছিল না। খরস্রোতা চেলাই নদীর কারণে বিলটিও খরস্রোতা স্রোতস্বিনীরূপে বিরাজমান ছিল। ভাওয়ালের সেই সময়ের ভূস্বামী ঘটেশ্বর ঘোষ ছেলের সলিল সমাধির কারণে ৮০টি খাল কেটে চেলাই নদীর জল নিঃশেষ করে ফেলেন। তার পরেই এটি প্রকাণ্ড বিলে পরিণত হয়।
20170309161802.jpg)
বেলাই বিল মানেই শাপলার ছড়াছড়ি।
চেলাই নদীর সাথেই বেলাই বিল। একই সাথে একটি নদী আর বিলের সৌন্দর্যে ঘেরা জায়গা সচরাচর দেখা যায় না। ঢাকার কাছে উন্নত ভূমির যেসব বিল রয়েছে এর মধ্যে বেলাই বিল রূপ-সৌন্দর্যে অনন্য। বিশাল এই বিলটির কোনো না কোনো স্থানে প্রায় সারা বছরই পানি থাকে। তবে বর্ষায় এর রূপ বেড়ে যায় বহুগুণ। বর্তমানে বিলটি আট বর্গমাইল এলাকায় বিস্তৃত হলেও একসময় এটি আরও বড় ছিল। বাড়িয়া, ব্রাহ্মণগাঁও, বক্তারপুর ও বামচিনি মৌজা গ্রামঘেরা বেলাই বিল। ৪০০ বছর আগের ইতিহাসে বেলাই বিলে কোনো গ্রামের অস্তিত্ব ছিল না। চেলাই নদীর কারণেই বিলটি স্রোতস্বিনী রূপ নেয়। কিংবদন্তি আছে, ভাওয়ালের সেই সময়ের ভূস্বামী ঘটেশ্বর ঘোষ ৮০টি খাল কেটে চেলাই নদীর জল নিঃশেষ করে ফেলেন। তার পরই এটি প্রকাণ্ড বিলে পরিণত বর্ষা মৌসুমে বিলের চারপাশে গ্রামের মানুষ ডাঙ্গি খনন করে। এখানে ধরা হয় মাছ। আর শুষ্ক মৌসুমে বিলটিতে ধান চাষ হয়।

নৌকা চলার সাথে সাথে বিকালের শান্ত পরিবেশে বেলাই বিল হয়ে ওঠে অপূর্ব।
এখানে ইঞ্জিনচালিত আর ডিঙ্গি নৌকা দুটোই পাওয়া যায়। যেটাতে মন চায় উঠতে পারেন। তবে হাতে অনেক সময় থাকলে শব্দহীন ডিঙ্গি নৌকাই উত্তম। নৌকা সারাদিনের জন্য ভাড়া করে নিতে পারেন। নৌকা চলার সাথে সাথে বিকালের শান্ত পরিবেশে বেলাই বিল হয়ে ওঠে অপূর্ব। বেশি সময় নিয়ে গেলে সঙ্গে করে অবশ্যই খাবার নিয়ে যাবেন। দ্বীপের মতো গ্রাম বিলের চারপাশে। বামচিনি মৌজা গ্রামটি বেলাই বিলের একটি দ্বীপ গ্রাম। এর বিশেষত্ব এক মৌজায় এক বাড়ি। গাজীপুরে এই বামচিনি মৌজা ছাড়া এমনটা দেশের আর কোথাও দেখা যায় না। হয়ত চোখে পড়ে যাবে শস্য ঝাড়াইয়ের দৃশ্য। বাতাসে উড়ছে তুষের গুঁড়া, ধুলো। আশপাশের সব চড়ুই পাখি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শস্যদানা খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে। ছবির মতো সুন্দর সে দৃশ্য। চেলাই নদীর কী স্বচ্ছ টলটলে পানি! খুব বেশি চওড়া নয় চেলাই নদী, তবে খুব গভীর । আগের সেই খরস্রোতা রূপ আর নেই।
বেলাই বিল মানেই শাপলার ছড়াছড়ি। কেবল চারিদিক তাকিয়ে থাকতে মন চাইবে আপনার। নদীর নীল আকাশের বুকে যেন রঙিন কারুকার্য। দূরের সবুজ, মায়াবী আকাশ, বিলের পানিতে সেই আকাশের ছায়া আর একটু পর পরই বাতাস যেন উড়িয়ে নিয়ে যায়। সব মিলে এক অপূর্ব সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে। চারিদিকের নিস্তব্ধতা, পানির হাল্কা স্পন্দন আর ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দে অন্যরকম ভালোলাগা জেগে ওঠে প্রাণে। সন্ধ্যায় অসাধারণ এক সৌন্দর্য ফুটে উঠে বেলাই বিলে। সাদা বক আর গাঙচিল উড়ে যায় তার নীড়ে। সে এক মন হরণ করা দৃশ্য।

কানাইয়া বাজারের ঠিক পাশেই চিলাই নদী আর বেলাই বিল। চিলাই নদীর উপরে কানাইয়া ব্রিজ। ওটা পেরুলেই হাতের বামপাশে একটা মেঠো পথ। পথের দুই ধারে গাঢ় সবুজ ঘাসে ছেয়ে আছে। এখানটায় ইঞ্জিনচালিত আর ডিঙি নৌকা দুটোই পাওয়া যায়। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় অনেকদূর পর্যন্ত যাওয়া যায়।
এছাড়াও নদীর পাশে ‘ভাওয়াল পরগণা’ (শ্মশান ঘাট বা শ্মশান বাড়ি) আছে। চাইলে নদীর পাশেই এ শ্মশান বাড়িটিও দেখে আসতে পারেন
কীভাবে যাবেন:
মতিঝিল বা মহাখালি থেকে গাজীপুরগামী বিআরটিসি বা গাজীপুর পরিবহনের বাসে উঠুন। নামবেন গাজীপুর শিববাড়ি মোড়ে। একটু হেঁটে সামনে গিয়ে কানাইয়া বাজার যাবার টেম্পুতে উঠুন। ৩০ মিনিট পর কানাইয়া বাজারে নামুন। ভাড়া নেবে ১০ টাকা। কানাইয়া বাজারে নেমে ব্রিজ পেরিয়েই চেলাই নদী।
যারা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাবেন তারা টঙ্গী ফ্লাইওভার পার হয়ে সামনের দিকে যেতে থাকুন। পুবাইল কলেজ গেট থেকে বামদিকের ছায়াঘেরা রাস্তায় ঢুকে যান। এখান থেকে মাইল চারেক দূরে (জল জঙ্গলের কাব্য পার হয়ে) গিয়ে ডানে টার্ন করে মিনিট দশেক গেলেই কানাইয়া বাজার।

এখানে এসে একটা নৌকা ভাড়া করে নিন। ছোট নৌকা হলে সারাদিন নেবে ৫০০-৬০০ টাকা। আর বড় নৌকা ২,০০০ টাকা। রাতে নৌকাতেই থাকা যায়। রাতে থাকতে হলে বাজার কমিটিকে জানিয়ে রাখতে হবে।
আপনার ভ্রমন সুন্দর ও শুভ হোক
Comments
Post a Comment