LETTER

SaiF UddiN


প্রিয় আমি,
পুর্বের চিঠিতে তুমি তোমার সৃতি ধাত্রী কে তোমার ভালো লাগা ছেলেটির সম্বন্ধে জানতে চেয়েছিলে।এখন সেই সৃতি ভান্ডার থেকে তার সম্বন্ধে কিছু লিখছি....
তার সাথে কথা বলতে অনেক ভালো লাগতো। কলেজের প্রথম দিনেই সে আমার নজরে লেগে যায়। তারপর থেকে বিভিন্ন আঙ্গিকে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করতাম যে আমি তাকে ভালোবাসি। আমি জানি না সে বুঝতো কি না আমি কি চাই। হঠাৎ একদিন সেই ছেলেটি কাল্পনিক ভাবে আমার সামনে এসে হাজির হয়।
- আপনি কি কলেজে নতুন?
- হ্যাঁ। আ....মি এই কলেজে নতুন।আ....পনি?
- আমি সেকেন্ড ইয়ারে।।।আপনার নাম টা যেন কি?
- অপরূপা চৌধুরী। আপনার নাম?
- অর্পণ।....
-......
এভাবেই চলতে থাকে আমাদের দৈনন্দিন কথা-বার্তা। কথা বলতে বলতে এমন একদিন আসে, যেদিন আমার মনকে আর সামাল দিতে পারছিলাম না। অর্পণ কে যেকোনো ভাবেই বলতে হবে "আমি তোমাকে ভালোবাসি"........
- অর্পণ...?
- হুমম বলো অপরূপা।
- আচ্ছা তুমি কি কোনো মেয়েকে পছন্দ করো?
- না। এখনো পর্যন্ত কাউকে পাই নি।
- আচ্ছা যদি তুমি জানতে পারো যে কোনো মেয়ে তোমাকে ভালোবাসে। তখন তুমি কি করবে?
- মেয়েটি যদি আমার মনের মতো হয়.. তখন ভেবে দেখতে পারি।
- তোমার মন কেমন মেয়ে চায়?
- যে আমাকে সত্যিকারের ভালোবাসবে। আমার সুখ-দুঃখে আমার পাশে থাকবে। আমার ভালো লাগা - খারাপ লাগা বোঝার চেষ্টা করবে। মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে! তার মনে থাকবে আমার জন্যে অঘোর ভালোবাসার সমাহার।
- আমাকে দেখ!!!
- হ্যাঁ???
- একটু সময় ধরে আমাকে দেখ...! কিছু বুঝতে পারছো?
(খানিকক্ষণ পর)
- হ্যাঁ। বুঝতে পারছি।
- কি বুঝতে পেরেছো?
- আমার সন্দেহ সবসময় ভুল হয়। তাই আমি বলবো না।
- তোমার মন যেমন মেয়ে খোঁজে,আমি কি তেমন মেয়ে?
- জানি না।
- আমি তোমাকে ভালোবাসি অর্পণ।।।।।।।
**সবেমাত্র রিলেশনের শুরু। প্রতিদিন তার সাথে কথা হয়। তাকে যখনই আমি দেখি আমি এক ঘোর কল্পনায় হারিয়ে যাই। জানি না তার জন্যে এতো কেন টান আমার। কলেজ শেষে আমরা বড়দীঘির পাড়ে গিয়ে সময় কাটাতাম। দিঘির পাড়ের মিষ্টি বাতাসের গন্ধে তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকতাম। বাসায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতো আমি ঠিকমতো বাসায় ফিরেছি কি না। উঠতে,বসতে,ঘুমুতে গেলে শুধু তাকেই স্বপনে দেখতাম।। রাতে ঘুমানোর আগে সবসময় ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতো আমার খাওয়া হয়েছে কিনা, আমার পুরোদিন টা কেমন কেটেছে।আরোও কত কি। চোখ বন্ধ করে ভাবতাম আগামীকাল তার সাথে দেখা হলে কি কি কথা বলবো। অনেক অনেক প্ল্যানিং করে যখন অর্পণের সাথে দেখা হতো,তাৎক্ষণিক ভাবে সব প্ল্যানিং ভুলে যেতাম। কালকে সারারাত যা ভেবেছি তার একটুও মনে পড়ছে না।সব গুলিয়ে যেতো। আবার যখন বাসায় ফিরে ঘুমানোর সময় হতো, তখন মনে পড়ে,ইসসসসসস!!! আজকে এই কথাটা বলা হয় নি,, আজকে ওই কথাটা বলা হয় নি।আরো কত কি!! আমাকে বিভিন্ন দিন বিভিন্ন রকম উপহার দিতো। বিভিন্ন রঙের চিঠি কার্ড। অর্পণের নিজের হাতের লেখা "দেওয়াল" খুব পছন্দের ছিল আমার। এত্তো ভালোবাসতাম তাকে, আমি ভাষায় প্রকাশ করে বোঝাতে পারবো না কাউকে।এভাবে আমাদের সম্পর্কের একবছর চলে যায়। বছর তো যায়ই,গেছে সেও। আর কোনোদিন ও ফিরে আসে নি। একটা সড়ক দুর্ঘটনায় সে....................
থাক আর বলতে পারছি না। আজ সে নেই। কিন্তু তার পুরোনো সৃতি গুলো এখনো আমার কাছে জীবিত হয়ে বেঁচে আছে। আমি আজও তার অপেক্ষায় থাকি। কলেজ থেকে বের হয়ে একা একা বড়দিঘির পাড়ে বসে থাকি। সবই আগের মতো আছে শুধু একটা কিছু মিসিং মনে হয়। তার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে সময় শেষ হয়ে গেলে একসময় বাড়ি চলে আসি। তখনো তার ফোনের অপেক্ষায় থাকি, কখন সে আমাকে ফোন করে বলবে তুমি ঠিকমত বাড়ি পৌঁছেছ কিনা!!!.
এখানেই শেষ নয়..! রাতে ঘুমুতে যাবার আগে তার ফোনের অপেক্ষায় থাকি "অপরূপা? তুমি খেয়েছো? আজ সারাদিন কেমন কাটলো?" চোখ বন্ধ করলে পরেরদিন তার সাথে কি বলবো,তা প্ল্যানিং করতাম।কিন্তু এখন তা না। চোখ বন্ধ করে তার কথা ভাবতে ভাবতে চোখ বেয়ে দু'ফোটা জল পড়ে ঘুমিয়ে যেতাম।আর হারিয়ে যেতাম রঙিন কল্পনার দুনিয়ায়। এভাবেই আমার দিনগুলো কেটে যায়। তাকে ছাড়া আমার জীবন টা অসম্পুর্ণ থেকে গেছে। আর যাবেও।সারাজীবন।।।।
আজ আর পারছি না। যেটুকু লিখেছি, সেটুকু লিখতে বসেই পুরো পৃষ্টা ভিজে গেছে দু'চোখের ভালোবাসার কান্নায়।আমি আজও তার অপেক্ষায় থাকি। আমি জানি একদিন তুমি ফিরে আসবে।


ইতি,
তোমার মন।

Comments