- Get link
- X
- Other Apps
SaiF UddiN
আরাকান থেকে ইয়েমেন, ফিলিস্তিন থেকে সিরিয়ায় শিশুহত্যার উৎসব। যত রকমভাবে মানুষের শিশুহত্যা সম্ভব, এরা তার সবকিছুরই শিকার। সিরীয় শিশুরা যখন শরণার্থী নৌকায় পানিতে ডুবে মরছিল, তখন ইয়েমেনের শিশুরা মরছিল সৌদি-মার্কিন কোয়ালিশনের বোমায়। সিরীয় শিশুরা যখন আইএস-বিদ্রোহী-পশ্চিমা জোট আর সিরীয় সরকারি বাহিনীর ক্রসফায়ারে মরছিল, তখন ইয়েমেনের শিশুরা তিলে তিলে মরছিল দুর্ভিক্ষে। ক্লাস্টার বোমা, রাসায়নিক বোমা, বিমানের বোমা, কামানের বোমা, ড্রোনের বোমাসহ যত রকম বোমা আবিষ্কার করেছে পাশ্চাত্যের বিজ্ঞান, তার সবই প্রয়োগ হয়েছে দেশ দুটিতে।
ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘৃণা করেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ঘৃণা করেন কুর্দি নেতাদের, আসাদ ঘৃণা করেন তাঁর প্রতিপক্ষকে। তাই তাঁরা যুদ্ধ করেন। আর মারা যায় শিশুরা, মারা যায় শিশুদের বাবা-মা-ভাই-বোন-বন্ধুরা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ন্যায়যুদ্ধেরও প্রধান শিকার শিশুরা। যুদ্ধে যারাই মারা যায়, তারা কোনো না কোনো শিশুর বাবা-মা-ভাই-বোন এবং মরে তারা নিজেরাও।
সিরিয়ায় গণহত্যা চলছেই। প্রথমে নামল ‘মডারেট রেবেল’ নামের বিদ্রোহীরা। তাদের প্রশিক্ষণ দিতে সিআইএ খরচ করেছিল ৫০০ মিলিয়ন ডলার। তারপর সৌদি-ইসরায়েলি মদদে নামল আইএস নামের জল্লাদেরা। রাশিয়া আর বাশার সরকার যখন তাদের উচ্ছেদ করল, তখন হাতে রইল কেবল কুর্দি বিদ্রোহীরা। কিন্তু সিরীয় কুর্দিরা ইরাকি কুর্দিদের মতো নয়। তারা স্বায়ত্তশাসনই চেয়েছে, স্বাধীনতা নয়। তাই এ মাসের গোড়ায় সিরীয় সরকারি বাহিনী কুর্দি শহর আফরিনে এসে হাজির হলে গুলির বদলে তাদের স্বাগত জানাল ফুলের ডালি। কারণ, আরও বড় ভয় তুরস্কের নতুন সুলতান এরদোয়ান। স্বপ্নে তিনি নিজেকে ওসমানিয়া সাম্রাজ্যের নয়া সুলতান ভাবা শুরু করেছেন। আমেরিকার মদদে আর সিরিয়ার দুর্বলতার সুযোগে কুর্দিরা যদি সিরিয়ার কিছু এলাকায় স্বাধীন রাষ্ট্র কায়েম করে ফেলে? তুরস্কের ভয় সেখানেই। এটা ঘটলে তুরস্কের কুর্দিদের দমানো কঠিন হবে। ইরাক-ইরান-তুরস্ক-সিরিয়ার কুর্দিদের নিয়ে পশ্চিমাদের তথাকথিত স্বাধীনতার খেলা যদি শুরু না হতো, তাহলে কুর্দিদের দুর্ভাগ্য হয়তো আরও কমত। আর তা হলে এরদোয়ানেরও কুর্দি দমনের নামে সিরিয়ার ভেতর বাহিনী পাঠানোর সুযোগ আসত না।
এর মধ্যে দিয়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদেরই জয় হলো। তিনি প্রমাণ করতে পারলেন, সিরিয়া অখণ্ড ও স্বাধীন দেশ। আর আফিরিনের কুর্দিরা টের পেল দামেস্কের ছাতার নিচে সিরীয় নাগরিক হিসেবেই তারা নিরাপদ। কিন্তু মানজিব শহর এখন ত্রিমুখী বিপদের সামনে। এক দিকে তুর্কি বাহিনী, আরেক দিকে সিরীয় সেনা। শহরের মাঝখানে বসে আছে মার্কিন বাহিনী। স্পষ্টত, সিরিয়ায় শেষ লড়াই হবে মার্কিন জোট ও রুশ সমর্থনপুষ্ট সিরীয় বাহিনীর মধ্যে। ওদিকে ইসরায়েলের কিংকং প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর গদি টলমল। তাঁর দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজপথে চলছে বিক্ষোভ। এমন সময় একটা ‘সুন্দর সংক্ষিপ্ত’ যুদ্ধ তাঁকে জনপ্রিয়তা দিতে পারে। একই চিন্তা ট্রাম্প, পুতিন, এরদোয়ান, সবারই। চার পাগলের এই মেলা হলে সংক্ষিপ্ত যুদ্ধটা বিশ্বযুদ্ধে রূপ নিতে পারে। ইসরায়েলও তাতে নিরাপদ থাকবে না।
আমেরিকা যদি সিরিয়াকে সিরিয়ার মতো থাকতে দেয়, তাহলে এই যুদ্ধ কালই থেমে যাবে। ইসরায়েল যদি শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশীর আচরণ করে, সিরিয়ার গোলান হেইটসের দখল ছেড়ে দেয়, ইরানের সঙ্গে শত্রুতা বন্ধ করে, তাহলে পরশুর যুদ্ধটা ঘটবে না। সিরিয়ায় আমরা গণতন্ত্র চাই, নির্বাচন চাই, কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন চাই, কিন্তু তার জন্য কোনো বিদেশি মাতবর আসার দরকার নেই। জনগণকে সুযোগ দিলে তারাই নিজেদের ভাগ্য তৈরি করে নিতে পারে। কিন্তু আমেরিকা মনে হয় এমন এক জুয়াড়ি, শেষ বাজিটি না হারলে জুয়ার বোর্ড ছেড়ে সে উঠবে না। পৃথিবীতে সভ্যতা বলে কিছু নেই, এটা মেনে নিয়েই আমাদের সব যুদ্ধের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নিহত ইহুদি কিশোরী আনা ফ্রাংকের ডায়েরি আমাদের আজও কাঁদায়। কিন্তু কত কত আনা ফ্রাংক ইরাক-আফগানিস্তান-সিরিয়া-ইয়েমেন ও ফিলিস্তিনে মরে যাচ্ছে! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আনা ফ্রাংকে যদি আমেরিকা শরণার্থী হিসেবে ভিসা দিত, তাহলে ওই মেয়েটিসহ অনেকেই বেঁচে যেত। আমরা মনে রাখছি, আমেরিকা-ইসরায়েলের মধ্যপ্রাচ্য ভোগের বাসনাই অজস্র শিশুর অসহনীয় মৃত্যুর আদি কারণ। সেদিকে না তাকিয়ে বিশ্বনেতারা দাভোসে পার্টি করছেন, বেড়াচ্ছেন, হাসছেন। কিন্তু আমরা তো আর নিতে পারছি না!
শিশুরা মর্ত্যের দুনিয়ায় আসা এক টুকরা স্বর্গ, বিশুদ্ধ মানবতার মন, প্রাপ্তবয়স্কদের মানবিক রাখার প্রেরণা—তাদের হত্যা মেনে নিলে মানবতার ধ্বংস অনিবার্য। সিরিয় শিশুদের এই মৃত্যু নিয়ে কবিতা লিখেছেন জনপ্রিয় সাহিত্যিক আনিসুল হক। তার শেষটা এই:
শিশুরা মর্ত্যের দুনিয়ায় আসা এক টুকরা স্বর্গ, বিশুদ্ধ মানবতার মন, প্রাপ্তবয়স্কদের মানবিক রাখার প্রেরণা—তাদের হত্যা মেনে নিলে মানবতার ধ্বংস অনিবার্য। সিরিয় শিশুদের এই মৃত্যু নিয়ে কবিতা লিখেছেন জনপ্রিয় সাহিত্যিক আনিসুল হক। তার শেষটা এই:
‘ট্রাম্প চাচ্চু, আমাকে হত্যা করো, প্লিজ
পুটিন আংকেল, আমার ঠিক মাথার ওপরে বোমা ছুড়তে বলো ওদের
লক্ষ্য যেন ভ্রষ্ট না হয়
আমাকে কবরে শুইয়ে দাও
আমাকে বেহেশতে পাঠিয়ে দাও
বেহেশতে আমার জন্য রুটি আছে
বেহেশতে আমার জন্য ঘুম আছে
বেহেশতে আমার জন্য নিরাপত্তা আছে
আব্বু আমাকে মেরে ফেলো
আম্মু আমাকে মেরে ফেলো
চাচ্চুরা আমাকে হত্যা করো...
করুণা করো করুণা করো করুণা করো
দোহাই করুণা করে আমাকে মারো
মেরে আমাকে বাঁচাও!
’
পুটিন আংকেল, আমার ঠিক মাথার ওপরে বোমা ছুড়তে বলো ওদের
লক্ষ্য যেন ভ্রষ্ট না হয়
আমাকে কবরে শুইয়ে দাও
আমাকে বেহেশতে পাঠিয়ে দাও
বেহেশতে আমার জন্য রুটি আছে
বেহেশতে আমার জন্য ঘুম আছে
বেহেশতে আমার জন্য নিরাপত্তা আছে
আব্বু আমাকে মেরে ফেলো
আম্মু আমাকে মেরে ফেলো
চাচ্চুরা আমাকে হত্যা করো...
করুণা করো করুণা করো করুণা করো
দোহাই করুণা করে আমাকে মারো
মেরে আমাকে বাঁচাও!
’
Comments
Post a Comment