মাসের একদম শেষের দিক। মানিব্যাগ হাতরিয়ে কয়েন টয়েন মিলিয়ে ৩৬ টাকার মত আছে। আনিস খানিকটা চিন্তায় পড়ে গেল। তিথী কিছুক্ষণ আগে ফোন করেছিল। ওর সাথে কি এক জরুরী দরকারে এক্ষুনি দেখা করতে যেতে হবে। মেসে বুয়া আসেনি। রান্না হয়নি, ক্ষুধায় পেট চো চো করছে। তার উপর আবার তিথীর জরুরী তলব !!
.
দশ মিনিটের রাস্তা। রিক্সায় গেলে হুদাই ১৫টাকা নিবে। কাছে থাকবে ২১টাকা। মাস শেষ হতে এখনো দুই দিন বাকি।
আনিস রিক্সা না নিয়ে দ্রুত হেটে হেটে ‘ধানসিঁড়ি রেস্টুরেন্ট’ এর সামনে আসলো। তিথী ফোন করে এখানেই আসতে বলেছিল। আনিস তিথীর সামনে গিয়েই হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
- হুম বলো, হঠাৎ কিসের এত জরুরী তলব??
- থামো থামো...আগে বল তুমি এমন হাঁপাচ্ছো কেন?
- না মানে ইয়ে...দ্রুত হেটে আসছি তো
- হেটে আসতে বলছে কে? রিক্সা নাও নি??
- নিতে চাইসিলাম, কিন্তু এই দেখ না, আমার কেমন মেদ বাড়তেসে তাই ইচ্ছে করেই দ্রুত হেটে চলে আসলাম। কি ভালো করিনি?
.
আনিস ক্যাবলার মত একটা হাসি দিয়ে নিজের বেড়ে যাওয়া পেটে হাত বুলাচ্ছে। এত লোকজনের ভীড়ে একটা সুন্দরী মেয়ের সামনে হাবলামত একটা ছেলে পেটে হাত বুলাচ্ছে। খুব বিশ্রী একটা ব্যাপার। তিথী খানিকটা রেগে গিয়ে আনিসের হাত ধরে ‘ধানসিঁড়ি’ রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়লো।
আনিস হতভম্ব হয়ে বললো, ‘কি ব্যাপার রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসলে কেন? কি বলতে চেয়েছিলে বাইরেই বলতে। আমার তাড়াতাড়ি যেতে হবে, কাজ আছে।’
তিথী রাগী চোখে অভিমানী গলায় বললো, ‘তুমি এত আনরোমান্টিক কেন বলতো? প্রেমিকার সাথে কেউ বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলে হুম? তোমার কোনো বন্ধু প্রেম টেম করে না? তাদের টা দেখে শিখতে পারো না? আচ্ছা ঠিক আছে, আমিই তোমাকে সব শিখাবো, এই যে আমরা রেস্টুরেন্টে বসছি, এখন তুমি আমাকে লাঞ্চ করাবা, আচ্ছা?’
.
আনিসের মুখটা নিমেষেই মলিন হয়ে গেল। কি বলবে সে বুঝতে পারছে না। তিথী বললো,
- কি ব্যাপার চুপ কেন? কথা বলছো না যে??
- ওহ হ্যা...আরে কিছু না।
বলতে না বলতেই তিথী এতগুলো খাবারের অর্ডার দিয়ে দিল।
তিথী মজা করে খাচ্ছে। আনিসের গলা দিয়ে আর খাবার যায় না। টেনশনে তার কপাল ঘেমে যাচ্ছে। ‘কি হলো খাচ্ছো না কেন??’ বলেই তিথী আনিসের পাতে বড় বড় আরো দুই টুকরা মাংস তুলে দিল। প্রচণ্ড ক্ষুধায় আনিস কিভাবে যেন পুরো তিন প্লেট ভাত খেয়ে ফেললো।
.
আনিসের টেনশন টা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে তিথী। তিথী আনিসের দিকে তাকাচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে। আনিসের মুখের এই অবস্থাটা দেখতে অনেক বেশী ভালো লাগছে তার।
খাওয়া শেষ করেই তিথী দ্রুত খাবারের বিল পে করে আনিসকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে এলো। বাইরে বের হয়ে আনিস বললো ‘কই কি যেন বলতে চেয়েছিলে, সেটাই তো বললে না?’
তিথী বললো ‘তেমন কিছু না। তোমার রুমমেটকে বলে রেখেছিলাম, রান্না যেদিন বন্ধ থাকবে সেদিন আমাকে ফোন করে জানাতে। তাই আর কি...। আমি রিক্সা ঠিক করে দিচ্ছি, যাও এবার লক্ষী ছেলের মত মেসে চলে যাও। খবরদার রাস্তায় কোনো মেয়ের দিকে তাকালে চোখ একদম উপড়ে ফেলবো’
.
আনিস রিক্সায় চড়ে ঢেকুর তুলতে তুলতে যাচ্ছে আর ভাবছে, আচ্ছা মেয়েটি তাকে এমন অস্থিরতায় ফেলে দিয়ে এত মজা পায় কেন? এত টেনেটুনে চলা সাধারণ একটা ছেলেকে এই মেয়েটা এতবেশী ভালবাসে কেন?
সে কোনো প্রশ্নেরই উত্তর জানে না। উত্তর জানতে ইচ্ছেও হয় না।...
.
অনেকে বলে গার্লফ্রেন্ড পালতে টাকা লাগে। ভারী মানিব্যাগ লাগে।
কিন্তু তারা জানে না, গার্লফ্রেন্ড পালতে ভারী মানিব্যাগ লাগলেও ‘ভালবাসার মানুষ’ পালতে ভারী মানিব্যাগ লাগে না।
.
লিখাঃ Saif Uddin
Comments
Post a Comment