https://t.co/ks9ezfMCTM
নীল পরী তুমি যেও না যেও না।আমাকে এভাবে একা রেখে।আমিত তোমাকে ছাড়া এক মূহূর্ত ও থাকতে পারব না।
.
-এই নীল উঠ ঘুম থেকে।কি আজে বাঝে বকশিস ঘুমের মধ্যে।(আম্মু)
-দূর তুমি আমার সপ্নটা ভেঙে দিলে।নীল পরী শেষপর্যন্ত কোথায় যায় সেটা ও দেখতে পেলাম না।এখন যাও আমি উঠছি কিছুক্ষন পর।
-তুই উঠবি কিনা বল।আমি কিন্তু তোর আব্বুকে সব বলে দিব।
-ওকে ওকে উঠছি উঠছি।
-হ্যা উঠে ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি টেবিলে আয় তোর আব্বু অপেক্ষা করছে।
.
কেন জানি প্রতিবারি এই মুহুর্তে এসে সপ্নটা ভেঙে যায়।না হয় আম্মু এসে ডেকে দিবে না হয় মৌ ফোন করে ঘুমটা ভেঙে দিবে।।কেন যে নীল পরীটা আমার পেছনে লেগেছে।ঘুমটা পুরাই প্যারায় প্যারান্বিত করে দেয়।আবার মুখটা ও দেখতে পায় না।আসা মাএ চলে যায়।
.
এবার না উঠলে আব্বু নিজেই এসে বকাবকি শুরু করে দিবে।তাই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলের দেখি গেলাম।আব্বু,আম্মু আমার ছোট বোন নাদিয়া টেবিলে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।আমি আবার আব্বুকে ভীষণ ভয় পায়।যার কারণে আমি কিছু না করলে আম্মু আমাকে আব্বুর ভয় দেখায়।তা অবশ্যই আমার জন্য মঙ্গলজনক।
আমি আব্বুকে সালাম দিয়ে চেয়ারে বসলাম।
.
-নীল তুই নাকি ঘুমে উল্টাপাল্টা কি সব বলিস(আব্বু)
-না আব্বু মনে হয় ঘুমের মধ্যে মানুষের মুখ বন্ধ হওয়ার জন্য যে সফটওয়্যার টা আছে সেটা মনে হয় আমার মধ্যে নেই।
-ত কি দিয়ে সেটা ইন্সটল করতে হবে।
-সকালে ঘুমের মাঝে কেউ ডিস্টার্ব না করলে তা আপনা আপনি ইন্সটল হয়ে যায়।
-সকালে ঘুমের মাঝে নীল পরীটা ডিস্টার্ব করে বুঝি।
.
এটা বলার পর তিনজনে উচ্চস্বরে হেসে উঠল।নিশ্চয় বদমাইশ নাদিয়াটা বলেছে আব্বুকে এসব।আমি আর কিছু না বলে কারো দেখি না তাকিয়ে খাচ্ছি।আব্বু আবার ও আমাকে বলল।
.
-ভার্সিটিতে যাবি না।
-হু
-তুই খেয়ে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে আমি তোকে ড্রপ করে দিচ্ছি।
-না আব্বু না দরকার হবে না।এতে তোমার অফিসে দেরি হয়ে যাবে।আমি যেতে পারব।
.
অত:পর আব্বু অফিসে চলে গেল।আমিও তৈরি হয়ে ভার্সিটির দিকে রওনা দিলাম।যাবার সাথে সাথে মৌ কে দেখি আমার দিকে তেড়ে আসতেছে।মনে হচ্ছে যেন পাগল ষাঁড়ের মত লাল কাপড় দেখে দৌড়াচ্ছে।এরকম ভাবে আসার যথেষ্ট কারণ ও রয়েছে।প্রতিদিন সকালে আমার আরামের ঘুম আর সপ্ন টা ভেঙে দেওয়ার পিছনে ওর যথেষ্ট অবদান রয়েছে।যার জন্য আজ মোবাইল বন্ধ রেখে ঘুমিয়েছিলাম।কিন্তু তা সত্বেও সপ্নটা আজ ও আম্মুর জন্য দেখা হল না।
.
আমি মৌকে দেখে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করলাম কিন্তু তাতে ও কাজ হল না।
ও এসে আমার কাছে আসতেই প্রশ্ন ছোড়া শুরু করে দিল।
-এই যে নীল সাহেব।আপনার মোবাইল বন্ধ কেন কাল রাত থেকে।(মৌ)
-আসলে রাতে চার্জ শেষ হওয়ার পর চার্জে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ছিলাম।
-একদম মিথ্যা বলার চেষ্টা করবে না।
-
-আচ্ছা আমার সাথে চল।
-কোথায়।
-চল না।
.
এক প্রকার জোড় করেই আমাকে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে।তাও আবার আমার হাত ধরে।মৌ এর এমন আচরণ দেখে আমি আশ্চর্য হলাম।হঠাৎ করে এমন আচরণ ও আমার হাত ধরে নিয়ে যাওয়াটা বুঝতে পারলাম না।কারণ ও কোনদিন আমার সাথে এমন আচরণ বা আমাকে স্পর্শ করে ও দেখেনি।
.
যখন ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছিলাম।আমার পাশেই একটা মেয়ে ছিল।দেখতে বেশ ভাল।আমি লেখার দিকে তেমন মনযোগ দিতে পারছিলাম না।কারণ বারবার মেয়েটির আমার দিকে তাকাচ্ছিল।কারণ মেয়েটি কিছু লিখতে পারছিল না।হয়ত কমন আসে নি।আমাকে কিছু বলতে গিয়ে ও বলতে পারছে না।অচেনা একটা ছেলেকে কীভাবে বলবে আমার কমন আসেনি।আমাকে একটু হেল্প করেন।আমি মেয়েটির অবস্থা বুঝতে পেরে মেয়েটিকে কিছুটা হেল্প করলাম।
.
পরীক্ষা শেষে চলে যাওয়ার সময় মেয়েটি আমাকে ডাক দিয়ে দৌড়ে আমার কাছে এসে বলা শুরু করল।
-আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দিব আসলে আমি বুঝতে পারছি না।
আমি মৌ বলে মেয়েটা আমার দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিল।আমি ভদ্রতা রক্ষার্থে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম
-আমি নীল।
.
এরপর কিছুক্ষন কথা বলে আমি বাড়িতে চলে এলাম।আবার মৌ সেদিন আমার নাম্বার ও নিয়ে ছিল।মাঝেমাঝে কথা হত ফোনে যদি ও আমি কোনদিন নিজ থেকে কল করতাম না তবুও মৌ আমাকে কল দিত।
.
ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দেখতে গিয়েছিলাম কিছু বন্ধুদের সাথে যারা আমার সাথে পরীক্ষা দিয়েছে।আল্লাহর রহমতে বন্ধুরা সবাই ভার্সিটিতে চান্স পাই।তখন মৌ আমাকে ফোন করে
ক্যাম্পাসের এক জায়গায় যেতে বলল।
যাওয়ার পর মৌ এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল।কিছু বুঝলাম না।অনেক কষ্টে কান্না থামিয়ে জানতে পারলাম মৌ ও চান্স পেয়েছে।কিন্তু এটাত খুশির সংবাদ কিন্তু ও কান্না করছে।পরে এটাও জানতে পারলাম মৌ দরিদ্র পরিবারের একমাএ মেয়ে।মা-বাবার ইচ্ছা ছিল ও ভার্সিটিতে পড়বে।পরিবারের দু:খ কষ্ট দূর করবে।কারণ ও পরিবারের একমাএ উপার্জন কারী।বাবার ভীষণ অসুখ বিছানা থেকে উঠতে পারে না।ছোট এক ভাই আছে মাএ ক্লাস সেভেনে পড়ে।
.
পরে মৌ আমার একজন ভাল বন্ধুতে পরিণত হয়।
বন্ধু হওয়া সত্বেও আমরা একজন আরেক জনকে তুমি বলে সম্বোধন করতাম।আমি মৌ বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করতাম।ও এতে না করলে ও আমি জোড় করে করতাম।কারণ ওকে সাহায্য করার মত তেমন কেউ ছিল না।আমি মৌকে অনেক বার আমাদের বাসায় নিয়ে গিয়েছিলাম।একদিন আম্মু আব্বুকে ওর সব কথা বলছিলাম।মৌ তখন কান্না করছিল।
তখন আব্বু মৌকে বলেছিল মা তোমাকে ভেঙে পড়লে হবে না।তোমার যত রকম সাহায্য লাগবে নীল বা আমাকে বলবে হবে।আমরা সবসময় তোমার পাশে আছি।সেই থেকে মৌ এর পরিবারের সাথেও আমাদের একটা ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
.
আম্মু একদিন মৌকে বলেছিল
-আমার বদমাইশ ছেলেটাকে একটু মানুষ করতে পার কিনা দেখেত মা।
-আন্টি আপনি চিন্তা করবেন না এইসব দায়িত্ব আমার উপর দিন।দুই দিনে আমি গাধাটাকে পিটিয়ে মানুষ করে ফেলব।(মৌ)
-কি আমি গাধা।(আমি)
-গাধার চেয়ে কম নাকি তুই(আম্মু)
সেই থেকে মৌ এর অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছি।সকালে ফোন করে আমার আরামের ঘুম নষ্ট করা।।প্রতিদিন ভার্সিটি যাওয়া।।কিছু না করলে আব্বুকে বলে দেওয়ার হুমকি।তাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া।
.
যাই হোক মৌ আমাকে ক্যাম্পাসের বাইরে একটা জায়গায় নিয়ে গেল।হঠাৎ এখানে কেন নিয়ে এল বুঝলাম না।আমাকে পাশে থাকা বেঞ্চটাতে বসিয়ে ও নিজে আমার পাশে বসল।
আমি এখনো চুপ করে এখনো ওর দিকে তাকিয়ে আছে।দুজনে কিছুক্ষন চুপ থাকার পর।মৌ নিরবতা ভেঙ্গে বলল।
.
-নীল পরীটা কে।
.
মৌ এর কথা শুনে আমি ত অবাক।ও জানল কীভাবে এসব কথা।নিশ্চয় এটা বদমাইশ নাদিয়াটার কাজ।এখন আমি কি বলব ভেবে পাচ্ছি না।
.
-ইয়ে মানে।
-নীল পরীকে সপ্নে দেখা হচ্ছে তাই না।আমাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে সপ্নে দেখ কত বড় সাহস তোমার।
.
কথাটা শুনে আমি মৌ এর দিকে বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে আছি।ও আমার এভাবে তাকানো দেখে লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রয়ল।
আমি জানি মৌ আমাকে অনেক ভালবাসে।কোনদিন মুখ ফুটে বলেনি।যা ওর আচরনের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।কাউকে মন থেকে ভালবাসলে তা যদি ভালবাসার মানুষটি না বুঝে না হলে বুঝে নিতে হবে তার ভালবাসা মিথ্যে।আর যদি বুঝে তাহলে তার ভালবাসা সত্যি।যা হয়ত সব মানুষ উপলব্ধি করতে পারে না।আমি অনেক আগে থেকেই মৌ কে পছন্দ করতাম।মৌ এর আমার প্রতি দুর্বলতা ও বুঝতে পারতাম।তাই আমি সরাসরি ওকে বললাম।
.
-মৌ তুমি কি আমাকে ভালবাস।
.
মৌ কথাটি শুনার পরে আমার দিকে তাকাল।এবং হ্যা সূচক মাথা নাড়ল।
.
-আমিত তোমাকে ভালবাসতে পারব না।কারণ আমি যে নীল পরীটাকে ভীষণ ভালবাসি।
.
কথাটা বলার পর মৌ এর মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল।
চোখ দুটো দেখে মনে হচ্ছে এখন কেঁদে দিবে।আমি আবার ও বললাম।
.
-শুনবে নীল পরীটা কে?
.
ও আবার ও হ্যা সূচক মাথা নাড়ল।
.
-আমার পাশে বসে থাকা বোকা মেয়েটা।
.
ও কিছু না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল।আজকে যা ইচ্ছা কেঁদে নাও।আর কখনো কাদঁতে দিব না।আজই আম্মু-আব্বুকে বলে মৌ এর বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাব।এবার সপ্নে চলে যাওয়া নীল পরী কে নয় বাস্তব পরীটাকে সারাজীবনের মত নিজের করে নিব।
Comments
Post a Comment