ভ্রমণপিপাসু মানুষেরা একটু ছুটি পেলেই দেশ ও দেশের বাইরে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। তবে দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়ার আগে প্রথমেই একটা তালিকা করা দরকার যে, কোন কোন দেশ কোন কোন দর্শনীয় স্থানের জন্য বিখ্যাত বা কোন শহরে মানুষ বেশি ভ্রমণ করে, আরো অনেক কিছু।
আজ জেনে নিন তেমনি ১০টি শহর সম্পর্কে যেখানে সবচেয়ে বেশি মানুষ বেড়াতে আসে-
১। প্যারিস
এটি ফ্রান্সের রাজধানী। উত্তর ফ্রান্সে ইল-দ্য-ফ্রঁস অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্রে সেন নদীর তীরে এ শহরটি অবস্থিত। প্রশাসনিক সীমানার ভেতরে প্যারিসের জনসংখ্যা ২,২১৫,১৯৭। দুই হাজার বছরেরও বেশি ঐতিহ্যের অধিকারী এই নগরী। এটি বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। রাজনীতি, শিক্ষা, বিনোদন, গণমাধ্যম, ফ্যাশন, বিজ্ঞান ও শিল্পকলা- সব দিক থেকে প্যারিসের গুরুত্ব ও প্রভাব এটিকে অন্যতম বিশ্ব নগরীর মর্যাদা দিয়েছে। ইল্-দ্য-ফ্রঁস্ তথা প্যারিস অঞ্চল ফ্রান্সের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। শহরটির উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে- আইফেল টাওয়ার, নোত্র্ দাম গির্জা, শঁজেলিজে সড়ক, আর্ক দ্য ত্রিয়োম্ফ, বাজিলিক দ্যু সক্রে ক্যর, লেজাভালিদ্, পন্তেওঁ, গ্রঁদ আর্শ, পালে গার্নিয়ে, ল্যুভ্র্, ম্যুজে দর্সে, ম্যুজে নাসিওনাল দার মোদের্ন ইত্যাদি। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসে প্যারিসে। প্রতি বছর প্রায় ১৪.৮ মিলিয়ন পর্যটক প্যারিস ভ্রমন করে।

২। লন্ডন
যুক্তরাজ্যের রাজধানী এবং পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম শহর হলো লন্ডন। এটি ইংল্যান্ডের টেম্স্ নদীর তীরে অবস্থিত। এ শহরে প্রায় ৭০ লক্ষ লোক বাস করে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে এটিই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর। কারণ সেই সময় বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সকল স্থানই ছিল ব্রিটিশ রাজত্বের অধীন আর লন্ডন ছিল সেই রাজত্বের রাজকীয় ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র। বর্তমান যুগেও লন্ডন পৃথিবীর অন্যতম প্রধান অর্থ-বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। শহরটির দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে- Trafalgar স্কয়ার, লন্ডন ব্রিজ, Covent গার্ডেন, লন্ডন আই, লন্ডন চিড়িয়াখানা, প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘর, গ্লোব থিয়েটার, চার্লস ডিকেন্স যাদুঘর এবং মাদাম তুসো. বিগ বেন। প্রতি বছর প্রায় ১৪ মিলিয়ন পর্যটক লন্ডনে বেড়াতে আসে।

৩। ব্যাংকক
এটি থাইল্যান্ডের রাজধানী ও প্রধান শহর। ১৯৯০ সালের আদমশুমারী অনুসারে এর জনসংখ্যা প্রায় ৮৫,৩৮,৬১০। শহরটি চাও ফ্রায়া নদীর পূর্ব তীরে থাইল্যান্ড উপসাগরের নিকটে অবস্থিত। ব্যাংককের পর্যটন এলাকার মধ্যে গ্র্যান্ড প্রাসাদ, Wat Pho এবং Wat অরুণ অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বজুড়ে এখানকার খাবারের বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। নাচ, গান ও নানা ঐতিহ্যে ভরা এই শহরে প্রতি বছর প্রায় ১০.২ মিলিয়ন পর্যটক ভ্রমন করতে আসে।

৪। সিঙ্গাপুর
সিঙ্গাপুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া মহাদেশের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এর সরকারী নাম প্রজাতন্ত্রী সিঙ্গাপুর। দেশটি মালয় উপদ্বীপের নিকটে অবস্থিত। সিঙ্গাপুর পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম অর্থনৈতিক ও পর্যটন কেন্দ্র। এ শহরে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ৯.৭ মিলিয়ন পর্যটক এ শহরটি ভ্রমন করতে আসে।

৫। কুয়ালালামপুর
এটি মালয়েশিয়ার রাজধানী ও প্রধান শহর। অনেক পর্যটকের খুব প্রিয় একটি শহর এটি। শহরটির পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু, যা ১৯৯৮-২০০৪ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ভবন বলে বিবেচিত ছিল। প্রতি বছর প্রায় ৮.৯ মিলিয়ন পর্যটকের আগমন ঘটে কুয়ালালামপুরে।

৬। নিউইয়র্ক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকুলের একটি অঙ্গরাজ্য হলো নিউইয়র্ক। এই রাজ্যের রাজধানী অ্যালবানি এবং বৃহত্তম শহর নিউইয়র্ক সিটি। নিউইয়র্ক সিটি সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল শহর। এই শহরের লিবার্টি আইল্যান্ডে বিখ্যাত ষ্ট্যাচু অব লিবার্টি অবস্থিত। এর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং, লিবার্টি এর মূর্তি, Ellis Island, Broadway থিয়েটার প্রোডাকসন্স, আর্ট মেট্রোপলিটান জাদুঘর , সেন্ট্রাল পার্ক,ওয়াশিংটন স্কোয়ার পার্ক, Rockefellerসেন্টার, টাইমস স্কয়ার ইত্যাদি অন্যতম। প্রতি বছর প্রায় ৮.৭ মিলিয়ন পর্যটক শহরটি ভ্রমন করে।

৭। দুবাই
মধ্যপ্রাচ্যের প্রাণকেন্দ্র বলা হয় দুবাইকে। উষর মরুভুমির শহর দুবাই আরব আমিরাতের সাতটি প্রদেশের মধ্যে একটি প্রদেশ। এটি পারস্য উপসাগরের দক্ষিণ তীরে আরব উপদ্বীপে অবস্হিত। ১৮৩৩ সাল থেকে দুবাই শাসন করে আসছে আল মাকতুম পারিবার। দুবাইয়ের বর্তমান শাসকের নাম মুহাম্মদ বিন রশীদ আল মাকতুম; পাশাপাশি তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও উপ-রাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করছেন। দুবাইয়ের প্রধান রাজস্ব আয় হচ্ছে পর্যটন ,রিয়েল এস্টেট এবং অর্থনৈতিক সেবা। দুবাইয়ের ৩৭ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস হতে রাজস্ব আসে ৬% এরও কম। প্রতি বছর প্রায় ৭.৬ মিলিয়ন পর্যটক ভ্রমন করে দুবাই।

৮। ইস্তানবুল
এটি তুরস্কের অন্যতম প্রধান শহর। এর পুরোনো নাম কন্সটান্টিনোপল। এছাড়া এটি বাইজান্টিয়াম নামেও পরিচিত ছিল। ১৪৫৩ সালে এটি তৎকালীন উস্মানীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে ঘোষিত হয়। এটি তুরস্কের সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির কেন্দ্রস্থল। ১৯২৩ সাল পর্যন্ত এখানেই ছিল তুরস্কের রাজধানী। এটি তুরস্কের বৃহত্তম শহর এবং এর জনসংখ্যা প্রায় ১২.৮ মিলিয়ন। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী শহর। এই শহরটি দুটি মহাদেশকে বিভক্ত করেছে। শহরের মসজিদের নির্মাণশৈলী এবং গঠন আকর্ষনীয়। প্রতি বছর প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন পর্যটক এই শহর ভ্রমন করে।

৯। হংকং
হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল গণচীনের দুইটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের একটি। অপর অঞ্চলটি হল মাকাউ। ২৬০ টিরও বেশি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই অঞ্চলটি পার্ল রিভার ডেল্টার পূর্ব দিকে অবস্থিত। এর উত্তরে চীনের কুয়াংতুং প্রদেশ এবং পূর্ব, পশ্চিম আর দক্ষিণে দক্ষিণ চীন সাগর অবস্থিত। হংকং মুলত একটি দ্বীপ।। হংকং ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একটি উপনিবেশ। এটি পৃথিবীর অন্যতম আর্থিক কেন্দ্র। প্রায় ৭ মিলিয়ন পর্যটক হংকং ভ্রমন করে প্রতি বছর।

১০। সাংহাই
সাংহাই চীনের দক্ষিণাংশের একটি প্রধান শহর। এটি চীনের সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি শহর। মূলত সাংহাইকে চীনের বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হয়। Yangtze নদীর তীরে এই শহরটি অবস্থিত। বাঁধ এবং শহরের ঈশ্বর মন্দির পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। প্রতি বছর প্রায় ৬.৭ মিলিয়ন দর্শক এ শহর ভ্রমন করে।

Comments
Post a Comment