নীলগিরি !

SaiF UddiN

নীলগিরির পাহাড় চুড়ায় রয়েছে সেনাবাহীনির পরিচালিত ’নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র’ যা, এখানকার সেব থেকে সুন্দর পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি। আর এখানকার নিরাপত্তার দায়িত্বেও রয়েছে বাংলাদেশে সেনাবাহীনির ইউনিট। তাই নিরাপত্তা নিয়ে কোন দুঃচিন্তার না করে পরিবার নিয়ে অনায়াসে নীলগিরি ভ্রমণ করুন বছরের যে কোন সময়। তবে বর্ষায় কখনও কখনও অতি বৃষ্টির কারনে পাহাড় ধ্বসের আশংকায় রাস্তা বন্ধ থাকে।

কিভাবে নীলগিরি ভ্রমণ করবেন

ঢাকা থেকে বান্দারবান আসার জন্য প্রথম সরির সকল পরিবহনেরই এসি এবং নন এসি বাস আছে তার যে কোন একটিতে চলে আসুন। নন এসি বাসের ভাড়া পড়বে ৫৫০ টাকা ও এসি বাসের ভাড়া পড়বে ৯৫০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা এবং সময় লাগে ৮ ঘন্টা থেকে ১০ ঘন্টা। এছাড়াও রেলপথ অথবা আকাশ পথ ব্যবহার করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসতে পারবেন। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম থেকে আবার বাস অথবা ব্যক্তিগত/রিজার্ভ গাড়ি ব্যাবহার করে বান্দরবান আসতে হবে।

সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর, তূর্ণা এক্সপ্রেস সহ আরো কিছু মেইল ট্রেন ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম নিয়মিত যাওয়া আসা করে এগুলোর যে কোন একটিতে আপনার সুবিধামত যেতে পারবেন। শ্রেনীভেদে ট্রেনের ভাড়া পড়বে ৩৫০ থেকে ১২০০ টাকা। এছাড়াও ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আকাশ পথেও আসতে পারবেন।

চট্টগ্রামের বদ্দারহাট থেকে প্রতি ঘন্টায় নিয়মিত বাস পাবেন, পূবালী ও পূর্বানী বাস দুটির জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ২২০ টাকা, এছাড়াও দামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকেও বান্দরবান যাওয়ার বাস পাবেন। বান্দরবান থেকে নীলগিরি ভ্রমণ করতে পারবেন রিজার্ভ গাড়ি (জীপ/চান্দের গাড়ি/মহেন্দ্র/সিএনজি) অথবা লোকাল বাসে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি লোকল বাসে না গিয়ে রিজার্ভ গাড়ি নেন।

এতে করে আপনি যাওয়ার পথে আশেপাশের আরও কিছু দর্শনীয় জায়গায় ঘুরে দেখতে পারবেন। যদি দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার পরিকল্পনা থাকে তবে বান্দরবান জীপ স্টেশন থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে নিন। গাড়ির ধরন অনুযায়ী ভাড়া পড়বে ৩০০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা। সময় লাগবে দুই থেক আড়াই ঘন্টার মত।

নীলগিরি
নীলগিরি

যদি কম খরচে যেতে চান তবে লোকাল বাস ব্যবহার করতে হবে তবে সময় লাগবে বেশি ভাড়া যাত্রিপ্রাতি ১২০ টাকা। বান্দরবান থেকে ১ ঘন্টা পর পর থানচির উদ্দেশ্যে নিয়মিত বাস ছেড়ে যায়। আর যতি লোকাল বাসে যেতে না চান এবং সদস্য সংখ্যা কম হয় তবে অন্য কোন গ্রুপের সাথে যোগ দিয়ে ভাড়া শেয়ার করে রিজার্ভ গাড়িতে যেতে পারবেন।

নীলগিরির পথে সেনা চেকপোষ্ট পড়বে, এখানে আপনকে নিরাপত্তার জনিত কারণে নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হবে। তবে মনে রাখবেন বিকেল ৫ টার পর সাধারণ কোন গাড়ীকে নীলগিরি যাওয়ার জন্য অনুমতি দেওয়া হয় না। নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রের জন্য প্রবেশ ফি জনপ্রতি ৫০ টাকা এবং গাড়ির পার্কিং ফি ৩০০ টাকা।

নীলগিরি ভ্রমণে কোথায় থাকবেন

নীলগিরিতে বাংলাদেশ সেনবাহিনী নিয়ন্ত্রিত নীলগিরি হিল রিসোর্ট সহ আরো বেশ কিছু থাকার ব্যবস্থা আছে। তবে থাকার খরচ নির্ভর করবে আপনি কোন সময় ভ্রমণ করছেন তার উপরে। যেমন আপনি যদি পিক সিজন অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারীর মধ্যে এবং যে কোন সরকারি ছুটির মধ্যে বেড়াতে যান তবে ভাড়া একটু বেশি গুনতে হবে।

কারন এ সময়টাতে পর্যটকের চাপ থাকে বেশি। আর এ সময়টাতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে পরামর্শ থাকবে আগে থেকেই হোটেল রুম বুকিং করে তর পরে বেড়াতে যান। এছাড়া বাকি সব সমযের জন্য ২০-৫০% ডিসকাউন্ট থাকে হোটেলগুলোতে।

নীলগিরি হিল রিসোর্ট

নীলগিরি হিল রিসোর্ট
নীলগিরি হিল রিসোর্ট (Image Source: bn.wikivoyage.org)

নীলগিরিতে থাকার জন্য সবথেকে আকর্ষনীয় জায়গা হচ্ছে বাংলাদেশ সেনবাহিনী নিয়ন্ত্রিত নীলগিরি হিল রিসোর্ট । এখানে রয়েছে মোট ৬টি কটেজে যার প্রতিটিতে রুম ভাড়া পড়বে ৮,০০০ টাকা। তবে এখানে থাকতে হলে আপনাকে বুকিং দিতে হবে প্রায় ১মাস আগে। এছাড়াও বান্দরবান শহরের আশে পাশে রয়েছ বেশ কিছু হোটেল, মোটেল এবং রেস্টহাউজ।

শ্রেণীভেদে এসকল হোটেল মোটেল এ থাকার জন্য খরচ পড়বে ৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টকার মধ্যে। তবে নীলগিরি রিসোর্ট সবার কাছে আকর্ষনীয় হওয়ায় সাধারণত মাসখানেক আগে বুকিং না দিলে রুম পাওয়া যায় না, বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে পূর্ব বুকিং ছাড়া রুম পাওয়া প্রায় অসম্ভব।

নীলগিরি হিল রিসোর্ট বুকিং ও যোগাযোগঃ
মোবাইল: 01769-299999

এছাড়া বেশীরভাগ পর্যটক বান্দরবান থেকে নীলগিরি দিনে গিয়ে দিনেই বান্দরবান ফিরে আসেন। বান্দরবানে থাকার জন্যে বেশ কিছু হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। বান্দরবান শহর ও তার আশেপাশেই হোটেল ও রিসোর্ট গুলোর অবস্থান। বান্দরবান থাকার জন্যে যে সকল হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে তার মধ্যে কিছু নিচে উল্লেখ কর হলোঃ

সাইরু হিল রিসোর্ট

অবস্থান: বান্দরবান শহর থেকে ১৮ কিলেমিটার দুরে চিম্বুক পাহাড়ের পথে পড়বে এই রিসোর্টটি। এটার ডিজইন এবং নান্দনিকতা সকলেই নজর কাড়তে সক্ষম।
ভাড়াঃ ভাড়া ১১০০০ থেকে ২১০০০ টাকা।
বুকিংঃ +8801887-057777
E-mail: agmsales@sairuresort.com
ওয়েবসাইটঃ www.sairuresort.com

নীলাচল নীলাম্বারী রিসোর্ট (Nilachol Nilambori Resort)

অবস্থান: সমতল থেকে ১৬০০ ফুট উচুঁতে অবস্থিত এই রিসোর্টটি বান্দরবান শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দুরে নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে অবস্থিত।
ভাড়াঃ এখানে সবগুলোই কাপল রুম, ভাড়া ৩০০০টাকা।
বুকিংঃ 01551-444000
E-mail: saidulbban@gmail.com
ফেসবুক পেইজঃ নীলাচল নীলাম্বারী রিসোর্ট

হোটেল হিল ভিউ

অবস্থান: বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর পাশেই।
ভাড়াঃ ভাড়া ১০০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
বুকিংঃ +880 1818-270082
E-mail: info@hotelhillviewbandarban.com
ওয়েবসাইটঃ www.hotelhillviewbandarban.com

হোটেল হিলটন

অবস্থান: অফিসার্স ক্লাব, ইসলামপুর রোড, বান্দরবান।
ভাড়াঃ ভাড়া ১২০০ থেকে ৩৫০০ টাকা।
বুকিংঃ 8801551712111, 01747-626111
ফেসবুজ পেজঃ হোটেল হিলটন

হোটেল নাইট হেভেন (Hotel Night Heaven)

অবস্থান: বান্দরবান শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রের কাছাকাছি।
ভাড়াঃ ভাড়া ২২০০ টাকা থেকে ৫৫০০ টাকা পর্যন্ত।
বুকিংঃ 01876-000444, 01875-000444
E-mail: nightheaven365@gmail.com
ওয়েবসাইটঃ www.hotelnightheaven.com

গ্রীন পিক রিসোর্ট (Green Peak Resorts)

অবস্থান: বান্দরবান শহর থেকে ৪.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স ছাড়িয়ে আরো আধা কিলোমিটার গেলে চোখে পড়বে গ্রীন পিক রিসোর্ট।
ভাড়াঃ ভাড়া ৩৫০০ টাকা থেকে ৫৫০০ টাকা।
বুকিংঃ 0361 62393, +88 01845 77 66 33
E-mail: green.peak.resorts@gmail.com, greenpeakresortsales@gmail.com
ওয়েবসাইটঃ www.greenpeakresort.com

হোটেল প্লাজা:

অবস্থান: ওয়ার্ড ‍নং ০৭, আর্মি পাড়া, বান্দরবান। (বাস স্ট্যান্ড থেকে ৫মিনিট হাঁটা দূরত্বে)
ভাড়াঃ ভাড়া ১৫০০ টাকা থেকে ৬০০০ হাজার টাকা।
বুকিংঃ +88-01678060107, +88-01678060273
E-mail: info@plazabandarban.com
ওয়েবসাইটঃ হোটেল প্লাজা

রিভার ভিউ:

অবস্থান: বীর বিক্রম সড়ক, ইসলামপুর, বান্দরবান। (সাঙ্গু নদীর তীর ঘেষে হোটেলটির অবস্থান।)
ভাড়াঃ ভাড়া ২০০০ টাকা থেকে ৫০০০ হাজার টাকা।
বুকিংঃ +8801733115585
ওয়েবসাইটঃ রিভার ভিউ

পর্যটন মোটেল:

অবস্থান: পাহাড় ও লেকের পাশেই অবস্থিত। শহর থেকে ৪ কি:মি: দুরে মেঘলায় অবস্থিত।
ভাড়াঃ ভাড়া ৪০০ টাকা থেকে ৫৫০০ হাজার টাকা।
বুকিংঃ 01991139026, 01991139548
ওয়েবসাইটঃ পর্যটন মোটেল

নীলগিরি ভ্রমণে কোথায় কি খাবেন

নীলগিরিতে মাত্র একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে খাবার জন্য। এখান থেকেই আপনাকে খেতে হবে খিদে পেলে। তবে খাবার পেতে হলে আগে আপনাকে আগে থেকে অর্ডার করে রাখতে হবে। এখানে খাবার খরচ পড়বে জনপ্রতি ৩০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা। আর যদি এখানে না খেতে চান তবে বান্দরবান ফিরে শহরের যে কোন খাবার জায়গা থেকে খেতে হবে।

বান্দরবান শহরের মধ্যে খাওয়ার জন্যে বেশ কিছু রেস্তোরা রয়েছে, তার মধ্যে রুপসী বাংলা রেস্টুরেন্ট, মেঘদূত ক্যাফে, তাজিং ডং ক্যাফে, ফুড প্লেস রেস্টুরেন্ট, রী সং সং, কলাপাতা রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

Comments