সেদিন পার্কের ব্রেঞ্চে বসা একজোড়া ছেলে-মেয়েকে দেখে এগিয়ে গেলাম...দুজন'ই আমার অগ্রসর দেখে কিছুটা ইতস্তিত বোধ করছিল; অতঃপর সামনে গিয়ে-
.
আমিঃ ভয় পাবেন না..আমি আপনাদের বিরক্তও করবোনা...
.
ছেলেটিঃ তাহলে কি চান..এখানে কেন এসেছেন..?
.
আমিঃ যদি কিছু মনে না করেন একটা প্রশ্ন ছিল ভাইয়া...
.
ছেলেটিঃ কি প্রশ্ন শুনি..?
.
আমিঃ তার আগে বলুন আপনারা কি ম্যারিড.?
.
>হঠাৎ পুলকিত চেহারার অদ্ভুদ মায়াবী সুন্দর মেয়েটি একটা মুচকি হাসি দিয়ে-
.
মেয়েটিঃ না ভাইয়া এখনও হয় নাই...তবে সামনের বছর ইনশা আল্লাহ হবে দোয়া করবেন...
.
হুট করে ছেলেটি-
.
>>তোমার কি মাথা খারাপ হইছে.? কিসের সামনে বছর...তোমাকে আমি বলিনি "যতদিন পর্যন্ত না আমি পড়াশোনা শেষ করে একটা চাকরী যোগাড় করতে পারবো ততদিন বিয়ে কেন বাসায় জানাতেও পারবোনা...!!
.
মেয়েঃ কিহহহ...কি বললে তুমি...??
.
ছেলেঃ যা বলছি ঠিক বলছি..নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আগে আমি বাসায় কোনো মতেই কিছু জানাতে পারবোনা...!!
.
মেয়েঃ এই কথাটা তোমার প্রেম করার আগে বলতে মুখে কি হইছিল.? তখন তো খুব বলতা জান আমরা সামনের বছর'ই বিয়ে করবো..আমাদের একটা বেবি হবে; মেয়ে বেবি...কই গেল তোমার সেই কথা.??
.
ছেলেঃ আমি তো সেটা কথার কথা বলেছিলাম...সেটা ধরে তুমি বসে আছো কেনো..!!
.
মেয়েঃ আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাইনা..তুমি আমায় কবে বিয়ে করবে সেটা আগে ফাইনাল করো...
.
ছেলেঃ আগে প্রতিষ্ঠিত হয়ে নেই তারপর...
.
মেয়েঃ মানে কি ফাজলামো পাইছো...দেখো আমি কোন খেলনা নয় যে আমায় নিয়ে খেলবে...আর আমি চুপচাপ সেটা সহ্য করবো..
.
ছেলেঃ ধ্যাৎ এই শুরু হলো প্যানপ্যান...
.
মেয়েঃ কিহ আমার কথা তোমার প্যানপ্যান মনে হয়.??
.
[কপোত-কপোতীর ঝগড়ার তীব্রতা দেখে আমি সামনের দিকে অগ্রসর হলাম তবে এটুকু আচ করতে পারলাম..তারা দুজন দু দিকে চলে যাওয়া আগে ইংরেজী একটা শব্দ "ব্রেকাপ" বলে হাঁটা দেয়]
.
২
একটু দুরেই আবারো এক যুগলের দেখা পেলাম...তবে তারা দুজন মিষ্টি মুখ করা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় খানিকটা বিলম্ব হয় তাদের সামনে পৌছাতে...১০ মিন পর তাদের সামনে গিয়ে-
.
আমিঃ Excuse me ভাইয়া আপনারা কি বিবাহিত.?
.
ছেলেঃ অই মিয়া মশকরা করেন...আমাদের দেখে কি আপনার কাছে স্বামী স্ত্রী মনে হয়..? (রাগে ফোস-ফোস করে ওঠে ছেলেটি)
.
>>খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় ভাবে দাড়িয়ে থেকে আচ করতে পারলাম-সরাসরি প্রশ্নটা করা উচিত হয়নি<<
.
আমিঃ সরি ভাইয়া...আসলে আমার একটা প্রশ্ন ছিল তাই কথাটা জিজ্ঞেস করেছিলাম..
.
ছেলেঃ ইটস ওকে...কি প্রশ্ন বলেন দেখি..?
.
আমিঃ আপনারা যে প্রেম করছেন এর শেষ পরিনতি সম্পর্কে আপনারা দুজন কতোটুকু নিশ্চিত...??
.
ছেলেঃ মানে.?
.
আমিঃ মানে হলো আপনি যে মেয়েটিকে ভালোবাসছেন তাকে বিয়ের ব্যপারে কতোটুকু আশ্বস্ত করতে সফল হয়েছেন আপনি...!!
.
ছেলেঃ ও বিয়ে..হুম বিয়ে করবো আমরা; এবং সেটা পারিবারিক ভাবেই...অন্য সবার মত বাবা-মা'কে কষ্ট দিয়ে নয়...পরিবারকে খুশি করেই..
.
আমিঃ আপনাদের বাসায় কি সম্পর্কের ব্যাপরটি জানে.?
.
ছেলেঃ নাহ এখনো কিছু জানেনা..আরো ৪ বছর লাগবে আমাদের পড়াশোনা শেষ করতে..তারপর নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে দুজনার বাসায় জানাবো...!!
.
অামিঃ আপনার ভালোবাসার মানুষটি কি জানে এসব.?
.
ছেলেঃ হুম অবশ্যই...আসলে বাস্তব এসব ভাবনাগুলো ওর মাথা থেকেই বের হইছে..ওই বলেছে পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ে না দাঁড়ানো পর্যন্ত বিয়ে নিয়ে পিড়াপিড়ি না করতে...
.
আমিঃ তাহলে তো আপনি অনেক লাকি ভাই..এমন মনোভাবের মেয়ে পাওয়া অনেক কঠিন..
.
ছেলেঃ লাকি না ছাই..একমাস পর-পর ১ ঘন্টা করে দেখা...ফোন ফেসবুক টোটালি যোগাযোগ বন্ধ...ফেসবুকে যদি ভুলেও কোনো মেসেজ দেই তাহলে ২ মাস ব্লক করে রাখে...পরীক্ষার পর শুধু ৩ দিন তার সাথে ফেসবুকিং করতে হবে...এটা কি কোনো জীবন ভাই কন.?
.
আচমকা মেয়েটি বলেঃ ভালো না লাগলে মইরা যাও.. বেঁচে থাকলে তোমাকে এসব সহ্য করতেই হবে..."
.
ছেলেঃ হুম মরে গেলেই তো বেঁচে যাও...আরেক জনের জীবন জ্বলেপুরে ছারখার করে দিতে পারবা...আমার টা করে তো তোমার স্বাদ মিটছেনা..!!
.
মেয়েঃ কিহ..আমি তোমার জীবন জ্বলেপুরে ছাড়খার করছি.?
.
ছেলেঃ করছোই তো...প্রতিদিন ৫ টা মিনিট ফোনে কথা বললে তোমার কি এমন ক্ষতি হয় শুনি...
.
মেয়েঃ এ ব্যাপারে তোমার সাথে আমি কিছু বলতে চাইনা শাওন...!!
.
ছেলেঃ তা বলবা কেনো...আমার তো কোনো মূল্যই নেই তোমার কাছে...
.
মেয়েঃ প্লিজ শাওন...এটা নিয়ে একদম বাড়াবাড়ি করবেনা...
.
ছেলেঃ তুমি আমাকে এক্ষনি বলবে কেনো তুমি আমাকে সময় দাওনা...না হলে আই উইল বি ব্রেকাপ নাউ...
.
মেয়েঃ ওকে ফাইন বলছি...
.
ছেলেঃ হুম..
.
মেয়েঃ আমি যদি তোমার সাথে ফোনে ৫ মিনিট কথা বলি তাহলে ৫ ঘন্টাতেও তোমায় ভুলে কোনো কাজে মন দিতে পারিনা...সব কাজেই তোমার অস্তিত্ব টের পেয়ে যাই...যার ফলে কাজে বেশি বেশি ভুল করে ফেলি...আর পড়ায় তো একদম ই মন বসাতে পারিনা.. এখন তুমি'ই বলো আমি কি কাজ টা ভুল করেছি...তুমি কি চাও আমি পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করি?
.
ছেলেঃ কখনোই না...!!
.
মেয়েঃ হুম...তাহলে এসব উল্টা পাল্টা কথা কেনো বলো??
.
ছেলেঃ আর বলবোনা জান.....শুনো ময়না পাখি...!!
.
মেয়েঃ হুম বলো বাবুই...!
.
ছেলেঃ এত্তোগুলা ভালোবাসি তোমায়...(কেঁদে ফেলে দেয়)
.
মেয়েঃ আমিও তোমাকে ভীষন ভালোবাসি সোনাপাখি... (চোখের কোনায় বিন্দু জল)
.
.
অতঃপর আমি>> "হাসি মুখে; মন মাতানো তৃপ্তি নিয়ে প্রস্থান করলাম...তবে আসার সময় বুকের ভেতরটা কেমন জানি মোচর দিয়ে ওঠে বললো-উফ্ সত্যিই এভাবে যদি কাউকে ভালোবাসা যেত.??
.
#মরালঃ যারা ভালোবাসার মানুষকে দৈনিক বিয়ের প্যারা দেয় তাদের উদ্দেশ্য করে লেখা...প্লিজ মানুষটাকে একটু বুঝতে চেষ্টা করুন...বিয়ে সংসার এতো সহজ না...জীবন অনেক কঠিন...বিয়ে করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়না...আগে লাইফটাকে ভালো একটা পজিশনে দাঁড় করান...তারপরই এটা নিয়ে চিন্তা করুন...অযথায় এই প্যারা টা দিয়ে প্রিয় মানুষের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করবেন না...আর বালক-আপনিও কিছু করতে চেষ্টা করেন..আর কতো বাপের হোটেলে বাকী জমবেন বলেন..??
Comments
Post a Comment