সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় সায়ন দেখল মীরা উপরে উঠে
আসছে। সে মাথা নিচু করে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে
এমন সময় মীরা বলে উঠল, " কোথায় যাচ্ছেন?"
.
চমকে ফিরে তাকালো সায়ন। মীরা নামক মেয়েটাকে
দেখলেই তার অন্যরকম এক অনুভূতি হয়। এমন এক অনুভূতি
যার সংজ্ঞা খুঁজতে গিয়ে সে প্রতিবারই বিফল হয়।
মেয়েটাকে তার খুব ভালো লাগে। কিন্তু তার
কথাগুলোই যত ভয়ংকর!! কখন যে কি বলে ফেলে তার
কোন ইয়ত্তা নাই।
.
মীরা আবার বলে উঠল, " কি হলো? মৌনব্রত রাখছেন
নাকি?"
-- জ্বী না। একটু বাইরে যাচ্ছি।
: সে তো দেখতেই পাচ্ছি। বাইরে কোথায়?
-- লাইব্রেরীতে।
: ও... আচ্ছা আমাকে দেখলে মাথা নিচু করে থাকেন
কেন?
-- এমনিতেই...
: এমনিতেই কেন? আপনার স্বভাব এত মেয়েলী কেন? পুরুষ
মানুষের এত বোকা হলে চলে না। বুঝলেন?
-- জ্বী......
.
: চলুন, আমিও আপনার সাথে যাবো।
-- কোথায়?
: এইমাত্রই তো বললেন লাইব্রেরীতে যাবেন।
-- জ্বী.......
.
মীরার পিছন পিছন সিঁড়ি বেয়ে নামছে সায়ন। মীরা
তাদের বাড়িওয়ালার একমাত্র মেয়ে। বেশ মায়াবী
চেহারা। পরীর মত সুন্দর না হলেও অপছন্দ করার কোন
কারণ নেই।
.
মেয়েটাকে দেখলেই সায়নের মনে প্রেম প্রেম ভাবটা
জেগে উঠে। কিন্তু পরক্ষনেই সেটা আবার অতল গভীরে
হারিয়ে যায় মেয়েটার দস্যিপনার কারণে।
.
: কি হলো এভাবে মেয়েদের মত হাটছেন কেন?
-- জ্বী!!
: এত জ্বী জ্বী করেন কেন? আমার সাথে তাল মিলিয়ে
হাঁটুন।
.
মীরা সায়ন পাশাপাশি হাঁটছে। একটু এগোতেই মীরা
আবার থমকে দাঁড়াল।
: আপনার হাঁটা দেখে আমার বিরক্তি লাগছে। বুঝতে
পেরেছি আপনার চিকিৎসার প্রয়োজন।
--কি চিকিৎসা?
: হাঁটা চিকিৎসা। এই চিকিৎসার মাধ্যমে আপনার হাঁটার
ভঙ্গি ঠিক করতে হবে। প্রতিদিন আমার সাথে একঘন্টা
করে হাঁটবেন।
.
সায়ন বিস্মিত হয়ে মীরার দিকে তাকিয়ে রইল, মেয়েটা
এসব কি বলে? তাকে হাঁটা চিকিৎসা দিবে? এটা আবার
কোন ধরণের চিকিৎসা?
.
সায়ন আর কথা না বাড়িয়ে মীরার সাথে হাঁটতে লাগল।
লাইব্রেরী থেকে প্রয়োজনীয় বইগুলো কিনে নিল।
.
ফিরার পথে সায়নের মনে হলো মীরাকে কিছু
খাওয়ানো দরকার। এতদূর তার সাথে আসলো আর কিছু
খাওয়াবে না, ব্যাপারটা কেমন যেন অভদ্রকর হয়ে গেল
না!!
.
--তুমি কি আমার সঙ্গে এক কাপ চা খাবে?
: কোথায়?
-- কোন রেষ্টুরেন্ট বা........
.
মীরা তাকিয়ে আছে। সায়ন তার কথা শেষ করতে পারল
না। অসহায় ভঙ্গিতে তাকাল।
.
মীরা বলল, " দুপুরবেলা কি চা খাওয়ার সময়?"
-- না তা না। মানে.... আচ্ছা ঠিক আছে। বাসায় চলো।
..........................
পরদিন সকালে মীরা এসে হাজির। মা আমাকে ঘুম
থেকে ডেকে তুললেন। ড্রইং রুমে এসে দেখি মীরা
সোফায় বসে আছে। আমাকে দেখেই উঠে দাঁড়ালো।
: চলুন......
-- কোথায়?
: আজ থেকে আপনার হাঁটা চিকিৎসার শুরু।
.
সায়ন কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। প্রথমে ভাবলো
নিষেধ করে দিবে। আবার ভাবলো একদিন গিয়ে দেখাই
যাক না।
..............
মীরার সাথে হাঁটার মিশন আরম্ভ হলো। প্রথম প্রথম
ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগলেও এখন কেমন যেন ভালো লাগে
সায়নের। অল্পকদিনেই সায়ন হাঁটা হাঁটির ব্যাপারটা
উপভোগ করতে লাগল।
...................
একদিন হাঁটতে বের হয়ে দেখে মীরা নীল শাড়ি পড়ে
এসেছে।
সে হাঁটতে হাঁটতে মীরার দিকে আড় চোখে তাকায়।
তাকে দেখতে দেখতে সায়নের মনের কোণে লুকানো
প্রেম প্রেম ভাবটা আবার জেগে উঠে।
.
তার খুব বলতে ইচ্ছে করে, মেয়ে তুমি যতই দস্যিপনা
দেখাও না কেন, আমি যে তোমার মায়ার জালে আটকা
পড়েছি। তুমি কি পারোনা বুঝতে আমার ভালোবাসার
অনুভূতিগুলো তোমার জন্য সযতনে তুলে রেখেছি।।
...............
সায়ন নামক ছেলেটাকে মীরার খুব ভালো লাগে। শুধু
ভালো লাগে বললেও ভূল হবে আসলে ভালোবাসে।
ছেলেটার চেহারাতে একপ্রকার ছেলে মানুষি ভাব
কাজ করে। মীরা কিছু বললেই লাজুক ভঙ্গিতে তাকিয়ে
থাকে।
.
খুব অল্পসংখ্যক মানুষই পৃথিবীতে জন্মায় যাদের দিকে
একবার তাকালে আর চোখ ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছে করে
না। সায়নও ঠিক সেরকম। মীরা সায়নকে ভালোবাসলেও
মুখ ফুটে বলতে পারে না।
.
আর ছেলেটাও একটা মাথা মোটা। কিচ্ছু বুঝে না, একটা
মেয়ে হাঁটা চিকিৎসার নাম দিয়ে কেন তার সাথে
প্রতিদিন হাঁটতে যায়, কেনই বা তাকে দেখলে কথা
বলতে চায়, প্রতিনিয়ত খোঁজ-খবর নেয়, এসব কি সে বুঝে
না??
...............
সকাল থেকেই বৃষ্টি পড়ছে। মীরার মনটা খারাপ। আজ
আর সায়নের সাথে হাঁটতে যাওয়া হবে না।
.
ফোনটা বেজে উঠলো মীরার।
: হ্যালো....
-- মীরা তুমি কি একটু ছাদে আসবে?
: কেন?
-- সেতো তুমি আসলেই বুঝতে পারবে।
.
মীরা ছাদে এসে দেখে সায়ন বৃষ্টিতে ভিজছে। মীরা
ছাউনিতে দাঁড়িয়েই সায়নকে ডাক দিল।
.
সায়ন তাকিয়ে দেখল মীরা এসেছে। আজ সে মীরাকে
বলবে। তার অনুভূতিগুলোকে আজ প্রকাশ করবে।
অনুভূতিকে বেশিদিন চেপে রাখতে নেই, তাতে
অনুভূতিগুলো কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে।
.
সায়ন কাছে এসে মীরার দিকে হাত দুটো বাড়িয়ে বলল,
" তুমি কি সারাজীবনের জন্য আমার বৃষ্টি ভেজার সাথী
হবে?"
.
মীরা কিছু বলতে পারেনা। সে অবাক হয়ে সায়নের
দিকে তাকিয়ে থাকে।
.
সায়ন আবার বলে, " তুমি কি আমায় ভালোবাসবে?"
.
মীরা এবার হাত বাড়িয়ে সায়নের হাত দুটো ধরে বলল, "
ভালোবাসি তো......

Comments