সেদিনের ঘটনা আমার স্পষ্ট মনে আছে। বিয়ের টেনশনে দুপুরে কিছু খেতে পারিনি। তারপরে পরে আছি এই মোটা এক শাড়ি প্রচুর গরম পরেছে একই সাথে ক্ষুধা লেগেছে ,মাথা ঘুরছে, কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না। নতুন বউ কাউকে বলতেও পারি না যে আমার ক্ষুধা লেগেছে কিছু খেতে দেন লোকে কি ভাববে বিয়ে করে বউ ঘড়ে তুল্লাম নাকি রাক্ষস আসার আগেই খাই খাই করছে.......
রাত ১০ টা বাজে ও মানে আমার স্বামী ঘরে ঢুকল, ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিল। আমি চমকে উঠলাম এই বুঝি এখনি শুরু করবে। আমার এক বান্ধবী বাসর রাতেই pregnant হয়ে পড়েছিল আমার ও তো মনে হয় সেই অবস্থা হবে। দাদি বার বার বলে দিয়েছে স্বামী ঘড়ে ঢুকলে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে। আমার ইচ্ছা করছে না পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে তার পরেও সালাম করতে গেলাম। পায়ে হাত দেওয়ার আগেই সে ধরে ফেলল আমাকে। ভাবলাম সালাম করার সময় টাও কি সহ্য হল না? .নাহ আমার সব ভুল ভেঙ্গে দিয়ে সে আমাকে বলে বসল তোমার স্থান আমার পায়ে না বুকে। কথাটা শুনে প্রাণটা ভরে গেল। তার পরে আপন মনেই বলে গেল এই গরমের মাঝে এই রকম মোটা শাড়ি পরে আছ কেন ? এটা খুলে সুতির শাড়ি পর। এই বলে ও আমাকে একটা সুতি শাড়ি এনে দিল অন্য ঘড় থেকে। দিয়ে সে বারান্দায় গিয়ে বসল বলল শাড়িটা চেঞ্জ কর। শাড়ি চেঞ্জ করার পরে ও বলল আস দু রাকাত নফল নামাজ পরে আমাদের নতুন জীবন শুরু করি। অনেকটা সস্তি পেলাম এখন শুধু একটাই সমস্যা ক্ষুধা!! ক্ষুধা খুব আজব জিনিষ মানুষের জন্ম হোক বা মারা যাক ক্ষুধা থেমে থাকে না। আমার নানা যখন মারা গেল তখন সে বাড়িতে বিরাট কান্নার রোল এদিকে আমার এমন ক্ষুধা লেগেছে। এখন মৃত বাড়িতে তো আর খাবার চাওয়া যায় না। পরে দূর সম্পর্কের এক মামি আমাকে সে দিন খাইয়েছিলেন ।
নামাজ শেষে হতেই দরজায় টোকা শুনলাম ও দরজা খুললে ওর এক খালা অনেক ধরণের খাবার নিয়ে আসল। খালা চলে গেলে সে আপন মনেই বলতে লাগল আর বল না তোমাদের বাড়িতে যে খাবার দিয়েছে সেগুলো আমি কিছুই খেতে পারিনি লজ্জার কারণে। ওর কথা শুনে আমি ফিক করে হেসে ফেললাম। সে রাতে আমার ২টা পর্যন্ত বারান্দায় বসে গল্প করলাম।আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর একটা রাত ছিল সেই রাত বাইরে ছিল উথাল পাতাল জ্যোৎস্না আর হালকা বাতাস সব মিয়ে একটা চমৎকার পরিবেশ।
ঐদিন জীবনে অনেক কিছু শিখলাম। বাসর রাতের সম্পর্কে আমার যে ভুল ধারণা ছিল সেটা ভেঙ্গে গেল। ওদের সরি ওদের কেন বলি আমাদের সংসার সম্পর্কে অনেক টপ সিক্রেট বিষয় জানলাম। যেমন ওর বাবার সব কথায় বলতে হবে “হ্যাঁ”। শশুর আব্বা যদি সকাল ১০ টার সময় সে বলে এখন বিকাল। আমাকে অবশ্যই তার থেকে বেশি জোড় দিয়ে বলতে হবে হ্যাঁ বাবা এখন বিকাল কি? সন্ধ্যা হবহব করছে। আর মা মানে আমার শাশুড়ি আম্মার সামনে বোকা সেজে থাকতে হবে যেন কিছুই জানি না। এতে শাশুড়ি আম্মা রাগ করে না বরং খুশিও হয় হালকা স্নেহের ধমক দিয়ে বলবে বউ মা সারাজীবন কি শিক্ষা করলা শুধু কি পড়ালেখাই করছ আর কোন কাজ শিখ নাই? এই বলে সে নিজ হাতে সেটা দেখিয়ে দিবে খুশি মনে।
যেমন একটা ছোট উদাহরণ দেই। ডালে রান্না করার সময় লবণ আমি ঠিক মতই দিতে পারি কিন্তু আমি ইচ্ছা করেই ডালে নিজে লবণ দেই না আমার শাশুড়িকে ডেকে এনে লবণ দেওয়াই। এতে শাশুড়ি আম্মা খুব রাগের ভান করে বলে এত বয়স হইছে এখন ও ডালে লবণ দিতে পার না আমি না থাকলে কি করবা? আমি কিছু বলি না শুধু হাসি। অবশ্য ডালে নিজ থেকে লবণটা না দেওয়ার বুদ্ধি আমার না এই বুদ্ধি টা ওর মানে আমার স্বামীর। একদিন জিজ্ঞেস করলাম এই হাস্য কর কাজটা করার দরকার কি?
.
উত্তরটা ছিল এই রকম ও বলল...... মনে কর তুমি একটা অফিসে অনেক দিন ধরে কাজ করছ হটাত করে তোমার যায়গায় একটা নতুন লোক রাখা হল যে তোমার সব কাজ করবে।তুমি তখন বেকার হয়ে গেলে এক পর্যায় তুমি তাকে তোমার প্রতিদন্ধি ভাববে মনে করবে সে না থাকলে তো তুমি থাকতে তখন সে নানা ভাবে তোমার পিছে লাগবে। আর যদি তোমাকে না সরিয়ে দিয়ে তোমার কাজ কমিয়ে দিয়ে তোমাকে তার বস করে দেয় আর সেই কর্মচারী যদি হয় তোমার আনুগত্য তাহলে তোমার ভালই লাগবে। .
ঠিক তেমনি এই কাজ গুলো আম্মা এতদিন দেখা শুনা করত এখন তুমি করছ আর সব কাজ যদি তুমি কর তখন আম্মা মনে মনে ভাববে সব দায়িত্ব তুমি নিয়ে নিছ তার কোন মূল্য নেই তখন সে নিজেকে বেকার মনে করবে তার মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। তাই এই সামান্য ডালে লবণ দেওয়াটাকেই সে মনে করে এখন ও সংসারে তাকে দরকার। সে দিনি বুঝে ছিলাম আমার জীবনের সবচেয়ে ভাল বন্ধু হবে ও এবং হয়ে আছে আমার স্বামী.......
সংসার জীবনে প্রবেশ করেছি আজকে অনেক দিন কিন্তু কোন দিন মনে হয়নি এটা আমার বাবার বাড়ি থেকে খারাপ বরং মনে হয়েছে বাবার বাড়ি থেকে ভালই আছি। এর সবের মূলে রয়েছে আমার স্বামী। একই সাথে সে আমার বন্ধু , স্বামী , পরামর্শ দাতা, গার্জিয়ান সব কিছু। আল্লাহ যেন এমন স্বামী প্রতিটা মেয়েকে দেয়।

Comments