-ছাদে কি ? এতো রাতে ছাদে কি ?
.
-ইয়ে মানে এমনি ।
.
-কিসের ইয়ে? কিসের এমনি?
.
-এমনি আসি ।
.
মেয়েটা আমাকে বোধহয় একটুও সহ্য করতে
পারেনা । কেন পারেনা এটা আমিও
জানিনা
এখন অব্ধি ।কখনো বের করার চেষ্টা করিনি
।
সবাই যে ভালো চোখে দেখতে পৃথিবীতে
এমন
তো না।মেয়েটা আমাদের বাড়িওয়ালার
মেয়ে। তাদের বিল্ডিং এ ভাড়া থাকি
বেশ
কয়েকমাস হলো। কিন্তু আসার দুইদিন পর
থেকেই মেয়েটা আমাকে সহ্য করতে
পারেনা।
ওর বাবা মা ঠিক উল্টো। খুবই সাদাসিধে।
এই
মেয়ে কিভাবে.........কে জানে??? এমন
কেন?
অবশ্য মেয়েদের কোন কিছুর কারণ লাগেনা
।
তাদের সব কিছুর জন্য কারণ লাগে না ।
.
-কি হলো? কথা বলছেন না যে ? রাত্রি
চেঁচিয়ে উঠলো।
.
-নাহ কিছু না । চলে যাচ্ছি।আসবো না।
.
-আসতে কে মানা করেছে ? তারপর আবার
মা
কে বলবেন আমি আসতে মানা করেছি ।
কাজ
থাকলে আসবেন আর বিকেলে আসলে
আসবেন।
রাতে কি কাজ ?
.
কথাগুলো শুনে ইচ্ছে করছিলো মেয়েটাকে
এই
পাঁচ তলা থেকে ফেলে দিই ধাক্কা মারি ।
বাড়িওয়ালার মেয়ে বলে আর কিছু করলাম
না
।এই রাক্ষসী এসে বসে আছে । নিজে মেয়ে
হয়ে বসে আছে তার কোন সমস্যা নাই আর
আমি ছেলে হয়ে আসছি আমাকে নিয়ে যত
সমস্যা।নেমে এলাম।
.
-এই দাঁড়ান
.
রাত্রি আবার দাড় করালো। নিজেকে
যথাসম্ভব কনট্রোলে রেখে মুখ টা হাসি
হাসি
করে তাকালাম,
-জী বলেন।
.
-কি ভাবছেন বলেন তো।
.
-নাহ আজকে ঘুমাতে ভয় করছে । এর বেশি
কিছু
না ।
.
-কেন ? এমন একজনের মুখ দেখলাম এখন যে ভয়
করছে রাতে ঘুমালে যদি কোন দুঃস্বপ্ন
দেখি।
.
-মানে? আমাকে......
.
-কিছু না ...... বলেই আমি লাফিয়ে নেমে
এলাম। যাক মন টা ভালো হয়ে গেল। উপযুক্ত
কথা শুনিয়েছি ওকে।
.
দুইদিন পর যাচ্ছি ভার্সিটি । রাস্তায়
হাঁটছিলাম , কে যেন ডাক দিলো। পিছনে
তাকিয়ে দেখলাম ঝাঁসির রাণী রাত্রি
আসছে আমার দিকেই । যে তাড়াতাড়ি
হেটে
আসছে সেই বেগে যদি একটা ঘুসি মুশি
হাঁকিয়ে দেয় তো আমার নাক দেখে
ডাক্তাররাও সেলাই করতে গিয়ে ভিরমি
খাবে । এই মেয়ের কাছে অসাধ্য কিছুই নেই
।
দেখতে দেখতে সামনে এসেই দু হাত
কোমরে
তুলে কথার তীর ছোড়া শুরু করলো,
.
-এই সেইদিন রাতে আপনি আমাকে কি
বলেছিলেন?
.
আমি তো যথাসম্ভব হা করে জিজ্ঞাসা
করলাম,
-কোন রাতে? কি কথা?
.
-এই একদম ন্যাকা সাজবেন না বলে দিলাম।
আপনি আমাকে ডাইনি বলেন নি ?
.
-আমি কিছুই বলিনি । আর ঝগড়া করার কি
আছে ?
.
-আমি ঝগড়াতে?
.
-বলছেন নাকি সিউর হচ্ছেন ?
.
-মানে ? দেখুন বিবর্ণ বেশি হয়ে যাচ্ছে
কিন্তু....
.
-দেখুন রাত্রি, প্রথমত আমার নাম অরণ্য নট
বিবর্ণ আর দুই আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
ক্লাস
আছে ।আমি যাচ্ছি ।
আমি প্রায় দৌড়ে সামনে থেকে বেড়িয়ে
গেলাম । ওর রাগ এক্সটিম লেভেলে চলে
গেছে
যেকোনো সময় কিছু করে ফেলতে পারে
তাই
আর রিস্ক নিলাম না ।
.
তার পরে আর রাত্রির দেখা নেই । যদিও এর
মাঝে আর রাতে আমি গেলাম না ছাদে ।
কি
দরকার ঝামেলা করার । বাসা থেকে
তারপর
বের হতে হলে আমার মা আমাকে তেল
ছাড়াই
ফ্রাই করে ফেলবে । তবে বিকেলে ও
সাধারণত
থাকে না,তাই চলে গেলাম ছাদে।আগে
মাথা
টা একটু বের করে দেখলাম ও আছে নাকি।
নাহ
নেই।মোটামুটি বেশ খুশি হয়ে ঢুকলাম।
নিজেকে কেমন যেন ছাদের রাজা রাজা
মনে
হচ্ছে এখন । ব্যায়াম করতে ইচ্ছে করছে
খোলা
ছাদ পেয়ে । আসলে হটাত জল্লাদি টা না
থাকায় কি করবো কুল কিনারা পাচ্ছিলাম
না।
কিন্তু একটু লাফালাফি করে কোনায়
আসতেই
দেখি যেখানে বাঘের ভয় সেইখানেই রাত
হয়
। রাত্রি এক কোণায় বসে আছে যদিও কেমন
যেন চুপচাপ। রাগি রাগি ভাব নিয়ে আমার
দিকে তাকিয়ে আছে ।আমি একহাত তুলে
হাই
দিলে পা টা বাড়িয়ে চলেই যেতাম কিন্তু
রাত্রি কিছু বললো না দেখে সন্দেহ
হলো,এগিয়ে গেলাম ওর দিকেই মুখে হাসি
নিয়ে,
-কেমন আছেন?
.
বেচারি দেখি নিরুত্তর।সন্দেহ হলো। কোন
ছ্যাকা খেল নাতো।এমনিতেও যে জল্লাদি
মনে হয়না কোন ছেলে কন্ট্রোল করতে
পারবে।
সাহস করে জিজ্ঞাসা করেই ফেললাম,
-ইয়ে মানে ছ্যাকা খেলেন নাকি?
.
কথা টা আমার শেষ হওয়ার আগেই রাত্রির
হাতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট আমার গালে বসে
গেল।
আমি কিছুক্ষণের জন্য সত্যিই বিবর্ণ হয়ে
গেলাম হটাত এই চড় এ। মেয়ে দেখি আবার
চড়
মেরে আক্রমণাত্মক দৃষ্টিতে দেখে আছে।
ভয়ে
দু-পা পিছিয়ে গেলাম।দেখি মেয়ে আবার
অন্যদিকে দেখে আছে। আমি গালে হাত
বুলাতে বুলাতে পাশে গিয়ে বসলাম,
.
আসলেই মেয়েটা ছ্যাকা খেয়েছিলো ।
ভাগ্যিস ডাইনির মতো মেজাজ বলে
ছেলেটা
অতো বেশি ক্ষতি করতে পারেনি।ছেলেটা
দুই
নম্বরি ছিলো ওর কথা অনুসারে।আমিও
সান্ত্বনা দেয়ার জন্য হা তে হা মিলিয়ে
গেছি যাতে অন্তত গাল টা বাঁচানো যায়।
তবে যাইহোক মেয়েটা দেখলাম এখন একদম
মিশে গেছে আমার সাথে সেইদিনের পর
থেকে।মাঝে থেকে আমার লাভ হলো এখন
রাতে আসলেও কেউ কিছু বলে না । সেই
রাতে
ও আর আমি দুইজন ছাদে বসে আছি । ঠাণ্ডা
মোটামুটি।এদানিং মনে হচ্ছে ডাইনী
টাকে
ভালোবেসে ফেলেছি যদিও কখনো বলবো
না ।
না মেজাজের জন্য না । কারণ হলো
বাড়িওয়ালীর মেয়ে ।
.
-অরণ্য , কি ব্যাপার ? চুপ কেন?
.
-এমনি ।আচ্ছা এখন কাউকে পছন্দ করেন ?
মানে ভালো...
.
-ভাবিনি অমন..
.
-কেউ প্রপোজ করলে কি করবেন?
.
-একসেপ্ট করবোনা।
.
-ওহ ভালো।
.
আমার দিকে ফিরে সোজা তাকিয়ে
জিজ্ঞাসা করলো,
-প্রপোজ টা আপনি করবেন ? তাই তো?
আমি রীতিমতো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে
গেলাম।
অজান্তেই হাত নিজের মুখে চলে গেল।
গতবার
কারণ ছাড়া যে চড় মেরেছিলো এখন কারণ
নিয়ে মারলে তো মনে হয় মুখ টা
প্যারালাইজড হয়ে যাবে।রিস্ক নিতে
চাইনা।
.
-কি হল চুপ কেন? বলেন?
.
-নাহ মানে আসলে......
.
-কি আসলে ?
.
-নাহ একসেপ্ট করবেন না কাউকে তো বলেই
দিলেন আর এইসব ভেবে লাভ কি ?
.
-হুম। কষ্ট পাবেন
.
=বাদ দিন।
.
-অরণ্য ঠাণ্ডা লাগছে না আপনার?একটা
শার্ট
গায়ে দিয়ে এলেন শুধু?
.
-নাহ ঠিক আছে।
.
রাত্রি আমাকে অবাক করে দিয়ে ওর চাদর
টা
একটু খুলে বললো,
-আসুন ঠাণ্ডা লাগবে। চাদরের ভেতরে
আসুন।
.
-কি?আমার তখন মাথা ঘুরছে।
.
-কি হলো? চাদরের ভিতর আসুন। আর
আমাকে
তুমি করে ডাকার প্র্যাকটিস করুন।নয়তো
মার
খাবেন।বুঝলেন?
বলে নিজেই চাদর টা কাছে এনে আমাকে
ভিতরে ঢুকিয়ে নিলো।বুক টা ধক ধক করছে
ওর
উষ্ণতা পেয়ে। বলেই ফেললাম,
-ভালোবাসি রাত্রি.
.
রাত্রি কিছু না বলে মুচকি হেসে হাত দুটো
আরো শক্ত করে ঢুকিয়ে দিলো আমার
হাতের
ভিতর আর মাথা টা এলিয়ে দিলো আমার
কাঁধে.....
মনে তখন আমার একটা কথায় বারবার
বাজছে,
“রাত্রি তুমি আধার হলেও,
আমার কাছে হলে আলো,
তবুও কেন জানিনা,
তোমায় আমি বাসি এতো ভালো”
কিছু কিছু সম্পর্ক এএইভাবেই শুরু হয় হয়তো
Comments
Post a Comment