হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। গুজে থাকা শার্ট ঠিক করতে ব্যাস্ত হয়ে পরি আমি। শার্টের কলারটা ঠিক ঠাক আছে। মেয়েরা পরিপাটি ছেলে পছন্দ করে শুনেছি। হাতে ব্রেসলেট, হরেক রকম চেইন সাথে কলার উচিয়ে টি-শার্ট পরা ছেলেদের তারা ডাকে খেত। আমার খেত সাজার ইচ্ছে নেই।
ভার্সিটি গেইটের দিকে তাকিয়ে শান্ত হয়ে দাঁড়ালাম। বুকের হার্ট বিট ক্রমশই বাড়ছে। আজ সাত দিন পর দেখা। অন্য দিনের তুলনায় আজ তার ক্লাস আগে শেষ হওয়ার কথা। বিশ্বস্থ সুত্রে জানতে পেরেছি। ৩০ মিনিট পার হয়েছে কবে, আসছে না কেনো??
কেনো যেন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে কথা বলতে ভয় হয়। ভয়ের জন্য নামটি ও জানা হইনি। রাগী রাগী ভাব আছে তার চেহারায়। হঠাৎ যদি সামনে এসে প্রশ্ন করে __ " এই যে মিস্টার, মতলব টা কি আপনার? প্রতিদিন দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখেন?" এমন কোনও প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই।
আকাশে মেঘ জমেছে খুব। ক্ষানিক পর বৃষ্টি নামবে। বিদ্যুৎ চমকাতেই আকাশের দিকে তাকালাম। ক্ষানিক আগে রোদ্রজ্জল আকাশটি কালো মেঘে ঢেকে গেছে। ভাগ্যিস আসার সময় ছাতা নিয়ে বের হয়েছিলাম। প্রকৃতির উপর ভরসা করা যায় না। ক্ষণে ক্ষণে রুপ বদলায়।
বৃষ্টি নামতেই ছাতা খুললাম। আশে পাশে দাড়িয়ে থাকা মানুষ গুলো ছুটছে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে। হাতে ছাতা থাকার পরেও আমি দাড়িয়ে ভিজছি। ছাতির কয়েক জায়গাই ফুটো হয়ে আছে, ফুটোর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস, ইদুর গুলো বড্ড বেশি জ্বালাচ্ছে।
ঘাড় ফিরে তাকাতেই হার্টবিট মাত্রা জানান দিল। মেয়েটি দাড়িয়ে আছে গজ দুয়েক দূরে। ছাতা আনা হইনি তার, হাতে থাকা ভ্যানেটি ব্যাগই ভরসা। বৃষ্টির পানিতে চুল গুলো লেপ্টে আছে গালে, মেয়েটি দেখতে আহমরি সুন্দর না। তবে কিছু একটা আছে যে মায়ার টানে ছুটে আসি।
নিজের উপর রাগ উটছে খুব। ছাতা ফুটো করার আর সময় পেল না, ফুটো ছাতা হাতে নিয়ে মেয়েটির পাশে গিয়ে দাঁড়ালে নিশ্চিত হেসে দিবে। একবার ভাবলাম ছাতা বন্ধ করে দাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজি, সাহস হচ্ছে না, তা দেখেও যদি হেসে দেয়?
- আপনি তো দেখছি ভালো অভদ্র __ মিষ্টি একটি কণ্ঠ কানে আসতেই তাকালাম। মেয়েটি আমার পাশেই দাড়িয়ে।
আমি হাভার মত তাকিয়ে আছি মেয়েটির দিকে। মেয়েটি উত্তর না দিয়েই ছাতার ভিতর ঢুকল, আমি কিছু বলতে নিয়েও থেমে আছি। এমনটি হতে পারে জানা ছিল না।
- আপনি তো ভালোয় অভদ্র দেখে তো বুঝা যায় না।
- বুঝলাম না,
- ছাতা হাতে দাড়িয়ে আছেন, মেয়েটি বৃষ্টি তে ভিজছে। সৌজন্যতা বোধ দেখানো যেত না?
কিছু না বলে নিচে তাকিয়ে আছি আমি। ছাতার উপরে ফুটো গুলোর দিকে চোখ গেলে নিজেকে বোকা মনে হয়। ভদ্রতা না দেখানোর পিছনে কারণটা তাকে বলি কিভাবে?
বৃষ্টি মাত্রা কমেছে অনেকটা। এখন আর পরছে না, তবে মেঘ জমছে আকাশে। আমি হাবলুর মত দাড়িয়ে আছি। মেয়েটি মিটমিট হাসছে
- একটি রিকশা ডেকে দেওয়ার ভদ্রতাটুকু ও শিখিয়ে দিতে হবে?
মুচকি হেসে বলল মেয়েটি, আমি ছাতা হাতে ধরিয়ে হাটা ধরলাম। রিকশা একটা পেলে হয়, হার্টবিট যে হাতে লাফাচ্ছে যেকোন মিস খেতে পারে।
মেয়েটি রিকশায় উঠে বসল। আমি ফুটো ছাতা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছি।
- ছাতা হাতে দাড়িয়ে থাকবেন?
হাবার মত মাথা এপাশ ওপাশ দুলালাম। মেয়েটির মুখে সেই মুচকি হাসি
- ফুটো ছাতা হাতে নিয়ে ঘুড়ে লাভ নেই, বৃষ্টি নামবে আবার। রিকশায় উঠুন।
লজ্জায় মাথা কাটা যাওয়ার অবস্থা। সামনে কোনও ইদুর পেলে শহিদ করে ফেলতাম নিশ্চিত।
- কই উঠুন
দ্বিতীয় বার তাগাদা পেয়ে রিকশায় উঠে বসলাম। মেয়েটি এখনও হাসছে। আমি চুপ চাপ বসে আছি, কোনও ভাবে যদি নামতে পারি, এই মেয়ের সামনে আর আসছি না।
- গত সাত দিন কই ছিলেন?
আমার অবাক হয়ার কথা কিনা জানি না, তবে অবাক হয়েছি খুব। সাত দিন আসা হইনি, সে লক্ষ করেছে??
- অসুস্থ ছিলাম
- কি হয়েছিল? ভুর কুচকে জানতে চাইল সে
আমি মাথা নিচু করে আছি। অসুস্থের কারন বলা যাবে না, কারন শুনলে এবার হয়তো খিল খিল করে হাসবে।
- বললেন না?
- এমনি অসুস্থ ছিলাম।
মেয়েটি আবার হাসতে দেখে রাগ হচ্ছে। এইভাবে কেউ কথায় কথায় হাসে??
- হাসার কিছু ঘটেছে?
- না
- তাহলে হাসছেন কেনো?
- প্রতিদিন হাবলুর মত রাস্তায় দাড়িয়ে থেকে কি করেন?
যে ভয়ে ছিলাম সেটাই হলো, এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সাহস নেই।
- চুপি চুপি দেখা, পিছু পিছু হাটা আমার পছন্দ না
- তাহলে কি পাশে এসে হাঁটবো?
- বলেছি?
- না
- পাশে হাটতে হলে অনুমতি নিতে হয়
- সাহসের অভাব
- প্রেমে পরার আগে ভাবা উচিত ছিল
উত্তর দেওয়ার ভাষা নেই। কিছু একটা বলা যাই, কি বলবো ভাবছি। বলার আগেই রিকশার ড্রাইভার বলল
- স্যার নামেন
- নামবো কেন? _ অবাক হয়ে বললাম আমি,
- কারন আপনার গৌন্তব্ব চলে এসেছে হেসে বলল মেয়েটি।
নিজেই গালে চড় বসাতে ইচ্ছে হচ্ছে। দ্রুত নামার জন্য ভুল ঠিকানা বলেছি, একটু দূরে বললে কি হতো !!
- নামটি জানা হইনি
- আমি খেয়া, আপনি?
- রুদ্র
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রিকশা থেকে নামলাম। ভ্যানিটি ব্যাগে গুজে রাখা মেয়েটির ছাতা বের করে বলল
- এই ছাতায় ফুটো নেই
- আমার ছাতা?
- ফুটো ছাতায় বৃষ্টি পরে, ভিজে থাকলে জ্বর বাঁধবে,
- জ্বরে আমার সমস্যাই নেই
- আমার আছে
- কেন, কেন?
- সাত দিনের সময় অনেক দীর্ঘ,
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। রিকশার হুড বাঁধার আগে খেয়ার মিষ্টি হাসি ভাসছে চোখে। চলে যাওয়া রিকশার দিকে তাকিয়ে আছি আমি। বিদ্যুৎ চমকাতেই আকাশের দিকে তাকালাম। ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। হাতে থাকা ছাতি খুললাম। বৃষ্টি তে ভেজা যাবে না, সাত দিনের জ্বর বাঁধালে খেয়া হয়তো রাগী রাগী চেহারা নিয়ে বলবে __ " বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাঁধালে কেন? এই নাও তোমার ফুটো ছাতি। খবর দার আমার পাশে হাঁটবে না " ....

Comments