এত ভীড় পেরিয়ে নিজের সীটে বসে মনে
হচ্ছে যেন বিশ্ব জয় করে আসলাম |
ব্যাগটা কোলের উপর রেখে হেডফোন
লাগিয়ে পরম প্রশান্তিতে চোখ বন্ধ
করে গান শুনতেছি |কিছুক্ষণ পর কাধের
একটা নরম হাত অনুভব করলাম |না ঐটা
কোন মেয়ের হাত ছিল না |65+ এক চাচা
আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন বলছে |বাম
কানের হেডফোন খুলে
-কি যেন বললেন?
-বাবা(একটা টিকিট আমার দিকে
বাড়িয়ে)আমার সীটে গিয়ে এক্টু বসবে
আমি যেতে পারছি না
.
দাড়িয়ে থাকতে বলে নি জাষ্ট সীটটা
এক্সচেন্জ করতে চাইছে,এটা তেমন কিছু
না কিন্তু আমার মুখের এক্সপ্রেশনটা
এমন হলো দেখে মনে হবে লোকটা যেন
আমার দুইডা কিডনি চাইছে |হয়তো চোখ
খুলে পরী না দেখে নিরাশ হইছি তাই |এত
লোক থাকতে আমাকেই বলতে হবে |রাগে
গজগজ করতে করতে বললাম
-দেন
নিয়ে আবার যুদ্ধ করে সীট খুজে পাশে
যাইয়্যা আমি তো টাষ্কিত |আমার পাশের
সীটে মেয়ে |মনে হলো চাচার পায়ে সালাম
করে আসি |যাক অবশেষে আমার
রিলেশনসীপ ষ্ট্যাটাসটা চেন্জ হবে |তার
রুপের বর্ণনা আমি দিতে শুধু বলতে পারি
ট্রেনের প্রচন্ড ভীরের ভ্যাপসা গরমে যে
কোন ছেলের মনে বসন্তের হওয়া লাগাতে
সক্ষম সে |এসব ভাবতে ভাবতে চুপ করে
পাশে বসে পরলাম |আগেই বলে রাখি আমি
দুটো জিনিস দেখে ভয় পাই এক নম্বরটা
হলো মেয়ে |যাই হোক সে চোখ বন্ধ
করে হেডফোনে গান শুনতেছিল |আমি
পাশে আছি বুঝে নাই তাই হাতটা এদিক
দিছে |আমার হাতে হাত লাগতেই চমকে
উঠে সরিয়ে নিল |আমি একটা বলদ মার্কা
হাসি দিয়ে কানে হেড ফোন গুজে চোখ
বন্ধ করে পাশের জনকে নিয়ে ভাবতে শুরু
করলাম |হাল্কা ধাক্কা অনুভব করলাম |
চোখ খুলে দেখি পাশের জন কি যেন
বলছে|মেঘ না চাইতেই ঝড় |তরিঘড়ি করে
হেডফোন খুলতে গেল ছিড়ে
-আ আ আমি!
-আপনাকেই তো ধাক্কা দিলাম নাকি
-জ্বী বলুন
-কোথায় যাবেন?
-রাজশাহী
-আমি কোথায় যাবো জিজ্ঞেস করবেন
না!
-ও হ্যা,আপনি কোথায় যাবেন?
-আপনি যেখানে যাবেন
,আপনি কি একাই যাচ্ছেন?
-হুম,আপনি?
-আমিও |আপনি কি সারা পথ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে
যাবে নাকি?
-তো কি করবো |হেডফোনটাও গেল
-কেন আমার সাথে গল্প করতে কি খুব
খারাপ লাগছে?
-নাহ তা কেন হবে
আমার দিকে একটা হেড ফোন এগিয়ে দিল
|কিন্তু একসাথে দুজনের কানে নাগাল
পাচ্ছিল না
-আপনি অতো দূরে কেন এদিকে আসুন,না
আরো কাছে
|আপনার নামটাই তো জানা হয় নি!আমি
ইরা আর আপনি?
-প্রান্ত
জানতে পারলাম সেও আমার সাথেই পড়ে
-আপনি করে বলতে আমার ভালো লাগে
না |পর পর মনে হয় |আর যেহেতু আমরা
এক সাথেই পড়ি তাই তুমি করেই বলবো |
তুমিও তাই করবে
সম্মতি সূচক মাথা নাড়ালাম
ওর চুল উরে আমার মুখের উপর আসছে |
অন্য রকম ফিলিংস্ যা আগে কখনো
পাইনি
ওর চঞ্চল্যতা আমাকে এতটাই মুগ্ধ
করেছে যে এতক্ষণে লক্ষ্য করলাম কি
গান বাজছে
রবি ঠাকুরের আকাশ এত মেঘলা যেও
নাকো একলা...
আমি আর যে একলা নেই গো বাবু
ও ওর ব্যাগ থেকে দুটো আপেল বের করে
একটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আর একটা
নিজে খেতে শুরু করলো
.
ওর খাওয়া দেখছিলাম |ঐ সময়টাতে
আম্মুর একটা কথা খুব মনে
পরছিল'ট্রেনের মধ্যে অপরিচিত কেউ কিছু
দিলে খাবি না'কিন্তু আম্মু এ তো আর
কেউ না,তোমার হবু বৌ মা
-এই তুমি খাচ্ছ না ক্যান
ইরার ডাকে ভাবনায় ছেদ পরলো
এমন সুন্দর করে বিষ খেতে বললেও খাবো
আর এতো সামান্য আপেল
-কি বললা?
-না কিছু না
সরি আম্মু বলে দিলাম কামড়
ও আমার হাত ধরে কথা বলেই যাচ্ছে আমি
মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনেই যাচ্ছি আর হ্যাঁ হু
করছি.. ওর কাধে খুব মাথা রাখতে ইচ্ছা
করছে কিন্তু ও যদি কিছু বলে
অনেক সাহস করে কয়েক সেকেন্ডের জন্য
মাথাটা ওর কাধে রেখে আবার সরিয়ে
নিলাম |আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি
দিল আর নিজ হাত দিয়ে মাথাটা ওর কাধে
রেখে চুলের মধ্যে দিয়ে হাত বুলাতে লাগল
পরম প্রশান্তি তে আমার চোখ বন্ধ হয়ে
আসলো
.
চোখ খুলে দেখি আমি শুয়ে আছি,চারপাশে
অনেক লোক দাড়িয়ে আছে |সবাই কি কি
যেন বলছে |কিছুই বোঝা যাচ্ছে না |
মাথাটা খুব ব্যাথাচ্ছে |উঠে বসলাম |
এতক্ষণে টের পেলাম যে সারা শরীরে
আমার কিছুই নেই শর্টস্ ছাড়া,পাশেই পরে
আছে সেই ছেঁড়া হেডফোন
খুবই লজ্জা লাগলো |ব্যাগে কি ই বা ছিল
জমানো টাকা দিয়ে কেনা আম্মুর জন্য
কেন একটা সারি,আব্বুর পাঞ্জাবী,ছোট
ভাইয়ের একটা শার্ট |তেমন কিছু না কিন্তু
আমার জন্য অনেক কিছু |নিজের উপর ই
খুব রাগ হলো|সবাই হয়তো বুঝতে
পেরেছে আমি ট্র্যাজেডির শিকার
দুনিয়াতে খারাপ মানুষই শুধু নেই,আছে
ভালো মানুষও
আমার বয়সী একটা ছেলে ওর ব্যাগ থেকে
একটা প্যান্ট আর টিশার্ট বের করে
দিল,পরে নিলাম সেটা একটা আন্টি দিল
পানি মাঝ বয়সী এক আঙ্কেল কিছু টাকা
দিয়ে
বললো যা হয়েছে হয়েছে যাও বাবা বাসায়
চলে যাও
-কিন্তু আঙ্কেল...
-কি ভাবছো টাকা কিভাবে দিবে তাইতো |
দিতে হবে না মনে করো এটা তোমার ঈদ
বোনাস
-হুম
মানুষ এতটা ভালোও হয় ভাবছি
ছেলেটা আর আঙ্কেলে ফোন নম্বর নিয়ে
চলে আসলাম বাসায়
.
পরদিন দেশের সব বড় বড় দৈনিকের
ফ্রন্ট পেজে ছবি সহ ছাপা হলো
'অজ্ঞান পার্টির আরো এক শিকার,এবার
এক কলেজ ছাত্র' শিরোনামে
এটাই আমার প্রথম লেখা ভূল |ভূল
হওয়াটাই স্বাভাবিক নয় কি!

Comments