বাড়ির পুরোনো নথি ঘটতে গিয়ে সবুজ রঙের ডাইরী চোখে পড়ে তপু সাহেবের।কিছু না ভেবেই পড়া শুরু করলেন তিনি।
১.অনেক ইচ্ছে ছিল তোকে নিয়ে ডাইরী লিখব।তোকে নিয়ে অামার কাটানো মুহূর্ত গুলো লিখে রাখব ডাইরীর পাতায়।যখন তুই অামার কাছ থেকে দূরে থাকবি তখন ডাইরীর পাতাগুলো পড়ব বলে ভেবে রেখেছিলাম।
মায়ের ডাইরী।চোখের চশমা ঠিক করে নিলেন তপু সাহেব।পাতা উল্টিয়ে পড়া শুরু করলেন।
২.
১২/১২/১৯৯৬
জানিস বাবা তর পৃথিবীতে অাসার কথা যখন শুনলাম কত যে খুশি হয়েছিলাম তা বলে বোঝাতে পারব না।সে দিনেরর পর থেকে সারা রাত কোনো দিন ঠিক মত ঘুমাই নি।অামার নড়াচড়ায় তুই যদি ব্যাথা পাস।মাতৃত্বেরর স্বাদ যে কত অানন্দের তা শুধু একজন মাই বুঝতে পারে।থাক অার লিখব না অাজ।তর বাবা ডাকছে।জানিস তোর বাবাটা না বড্ড দুষ্টু অামাকে ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না।
১৭/১২/১৯৯৬
না এভাবে চলতে পারে না।অাজই ঠিক করতে হবে।জানিস অাজ তর বাবার সাথে ঝগড়া করলাম।অামি ঠিক করে রেখেছি ছেলে হলে নাম রাখব তপু অার মেয়ে হলে রাখব তটিনী।তর বাবা বলে তুই যদি ছেলে হস তাহলে তর নাম রাখবে অাপু অার মেয়ে হলে পুষ্প।অামি সোজা না করে দিয়েছি।এইটা নিয়ে বিশাল ঝগড়া।যদিও অামার কাছে তর বাবা হার মেনে নেয়।অনেক রাত হল খেতে যাই। অামি না খেলে তো অাবার তুইও অামার পেটের ভিতর না খেয়ে থাকবি।
চোখ মুছেন তপু সাহেব।জীবনে কি বড় ভুলটাই তিনি করেছেন।
৩.
১২/০৭/১৯৯৭
অাজ চেক অাপ করে অাসলাম।ডাক্তার অারো কি সব হাবিজাবি চেক অাপ করল।ডাক্তার বলল অামাদের ছেলে হবে।অাজ থেকে অামি তপু বলেই ডাকব।
১৩/০৭/১৯৯৭
তপু তোর বাবা খুব ভাল রে।অামাকে একটা কাজও করতে দেয় না।ভাত নামাতে গিয়ে একাকার করে ফেলে অামার বড্ড হাসি পায়।অাচ্ছা অামি একাই শুরু বকবক করে যাচ্ছি তুইও কিছু বল।কেমন অাছিস অামার সোনাবাবু?তর কোনো কষ্ট হয় না তো?
৭/০৯/১৯৯৭
ডাক্তার অাগামী পরশু সিজার করবে বলল।জানিস অামার খুব ভয় লাগছে।যদিও তর বাবা অামিকে বলছেন ভয় পেয় না।তোমার কিচ্ছু হবে না।উপরে অাল্লাহ অাছেন তো।
(চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে তপু সাহেবের।তার নয় বছরের ছেলেটি তার কাছে এসে বলল বাবা!বাবা! মা খেতে ডেকেছেন।চশমা খুলে তপু সাহেব চোখ মুছে বললেন যাও বাবা অাসছি।একপাশে স্ব-যত্নে রেখে দিলেন ডাইরীটি।)
গতকাল তোকে নিয়ে কিছু লিখতে পারি নি।ওটি রুমে ছিলাম।খুব ভয়ে ছিলাম।জানিস যখন তর বাবা অামার হাতটি ছেড়ে ওটি তে ঢুকতে দিয়েছিল তখন বার বার মনে হচ্ছিল অামার ফিরে অাসতে অাসতে পাবর কি না। তর সুন্দর চাঁদ মুখ অাবার দেখতে পারব কি না।যাক অাল্লাহ সহায়।
১২/০৬/১৯৯৮
অাজ তুই প্রথম হাটতে শিখলি। যদিও সারাদিন হামাগুড়ি দিয়ে ঘর মাতিয়ে রাখিস।
আজ অার পড়তে পারলেন না তপু সাহেব।বারান্দায় অনেকক্ষণ ধরে বসে অাছেন।
বাবা বাবা তুমি কাঁদছ কেন?পিছন থেকে ডাক দিয়ে উঠল তার ন'বছরের ছেলেটি।
কি উত্তর দিবেন তিনি?তবুও তিনি চোখ মুছে বললেন না বাবা কিছু না এমনি।মুখে শান্ত ভাব প্রকাশ করলেও ভিতরটা যেন দুমড়ে মুচরে যাচ্ছে।
কিছু দিন পর....
আজ তপু তুই আমাকে মা বলে ডাকলি!আহ!কি মধুর।অামার মাতৃত্ব আজ যেন স্বার্থক।
(৪)যে দিন তুই প্রথম ক্লাসে করতে গেলি সেদিন অামার অানন্দ দেখে কে!সময়ের প্রতিমহ কোল্ললে যখন তপু তই ফাইভে বৃত্তি পেলি সেদিন তুই অামাকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়েছিলি সেকথা অাজও অামার মনে পড়ে।এর পরেও কেটে যায় আরও পনেরটি বছর।তর বিয়ের বয়স হয়ে গেল যে।অাজ অামি বয়সের ভারে অক্ষম।চাঁদমুখ দেখে তর জন্য বৌ অানব যে।তর বিয়ের দিন ফুটফুটে বৌ দেখে অামার পরান জুড়িয়ে যায়।জানিস বাবা তো বাবাও বলত অামি নাকি খুব সুন্দরী ছিলাম।কিন্তু তর বাবা অামাকে তর কাছে রেখে চলে গেলেন। তর বাবার স্মৃতি অামি অাজও ভুলতে পারি না।সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।তোর বৌ অামাকে তর সামনে অকর্মা বলল।তুই চুপ করে ছিলি।তবুও অামি তোকে কিছু বলি নি।অামি চাই তুই ভাল থাক।তুই-ই তো অামার চোখের মনি।
(৫)
অাজ অামি কিছু লেখার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।তুই অামাকে কিভাবে বললি এই কথাটা?আমি বুড়ো আমার বিশ্রাম দরকার?বৃদ্ধাশ্রম অামার বিশ্রামের স্থান?আরে বাবা আমি কি করে তকে বুঝাবো অামি এবাড়িতেই ভাল অাছি এবং সবচেয়ে ভাল থাকব।তবুও অামি মুখ ফুটো কিছু বল নি। অামি চাই তুই ভাল থাক সবাইকে নিয়ে।
৪/২/১৪
সংঘত কারণেই অাজকের তারিখটা লিখে রাখলাম।অাজই তুই আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে অাসবি।আমি তোকে কোন বদ দোয়া দেই না আমি যে তর মা।আমি চাই তুই ভাল থাকিস।আজ তুই মস্ত বড় ডাক্তার।বাবা তুই অামারর শেষ ইচ্ছাটা পুরণ করিস।মরার পর কবরে মাটিটা অন্তত দিস।
(৬) ডাইরী পড়া শেষ করেন তপু সাহেব।চোখ থেকে অনবরত পানি ঝরছে।কিন্তু তাতে কিই বা আসে যায়।অসময়ের ফল যে তেতো হয়।গত বছর মারা গেছেন উনার মা।কবরের মাটিটাও দিতে পারেন নি ব্যস্ততার চাপে।অার দিবেই বা কিভাবে তিনি যে এক হতভাগ্য মায়ের অকৃতজ্ঞ সন্তান।
১.অনেক ইচ্ছে ছিল তোকে নিয়ে ডাইরী লিখব।তোকে নিয়ে অামার কাটানো মুহূর্ত গুলো লিখে রাখব ডাইরীর পাতায়।যখন তুই অামার কাছ থেকে দূরে থাকবি তখন ডাইরীর পাতাগুলো পড়ব বলে ভেবে রেখেছিলাম।
মায়ের ডাইরী।চোখের চশমা ঠিক করে নিলেন তপু সাহেব।পাতা উল্টিয়ে পড়া শুরু করলেন।
২.
১২/১২/১৯৯৬
জানিস বাবা তর পৃথিবীতে অাসার কথা যখন শুনলাম কত যে খুশি হয়েছিলাম তা বলে বোঝাতে পারব না।সে দিনেরর পর থেকে সারা রাত কোনো দিন ঠিক মত ঘুমাই নি।অামার নড়াচড়ায় তুই যদি ব্যাথা পাস।মাতৃত্বেরর স্বাদ যে কত অানন্দের তা শুধু একজন মাই বুঝতে পারে।থাক অার লিখব না অাজ।তর বাবা ডাকছে।জানিস তোর বাবাটা না বড্ড দুষ্টু অামাকে ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না।
১৭/১২/১৯৯৬
না এভাবে চলতে পারে না।অাজই ঠিক করতে হবে।জানিস অাজ তর বাবার সাথে ঝগড়া করলাম।অামি ঠিক করে রেখেছি ছেলে হলে নাম রাখব তপু অার মেয়ে হলে রাখব তটিনী।তর বাবা বলে তুই যদি ছেলে হস তাহলে তর নাম রাখবে অাপু অার মেয়ে হলে পুষ্প।অামি সোজা না করে দিয়েছি।এইটা নিয়ে বিশাল ঝগড়া।যদিও অামার কাছে তর বাবা হার মেনে নেয়।অনেক রাত হল খেতে যাই। অামি না খেলে তো অাবার তুইও অামার পেটের ভিতর না খেয়ে থাকবি।
চোখ মুছেন তপু সাহেব।জীবনে কি বড় ভুলটাই তিনি করেছেন।
৩.
১২/০৭/১৯৯৭
অাজ চেক অাপ করে অাসলাম।ডাক্তার অারো কি সব হাবিজাবি চেক অাপ করল।ডাক্তার বলল অামাদের ছেলে হবে।অাজ থেকে অামি তপু বলেই ডাকব।
১৩/০৭/১৯৯৭
তপু তোর বাবা খুব ভাল রে।অামাকে একটা কাজও করতে দেয় না।ভাত নামাতে গিয়ে একাকার করে ফেলে অামার বড্ড হাসি পায়।অাচ্ছা অামি একাই শুরু বকবক করে যাচ্ছি তুইও কিছু বল।কেমন অাছিস অামার সোনাবাবু?তর কোনো কষ্ট হয় না তো?
৭/০৯/১৯৯৭
ডাক্তার অাগামী পরশু সিজার করবে বলল।জানিস অামার খুব ভয় লাগছে।যদিও তর বাবা অামিকে বলছেন ভয় পেয় না।তোমার কিচ্ছু হবে না।উপরে অাল্লাহ অাছেন তো।
(চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে তপু সাহেবের।তার নয় বছরের ছেলেটি তার কাছে এসে বলল বাবা!বাবা! মা খেতে ডেকেছেন।চশমা খুলে তপু সাহেব চোখ মুছে বললেন যাও বাবা অাসছি।একপাশে স্ব-যত্নে রেখে দিলেন ডাইরীটি।)
গতকাল তোকে নিয়ে কিছু লিখতে পারি নি।ওটি রুমে ছিলাম।খুব ভয়ে ছিলাম।জানিস যখন তর বাবা অামার হাতটি ছেড়ে ওটি তে ঢুকতে দিয়েছিল তখন বার বার মনে হচ্ছিল অামার ফিরে অাসতে অাসতে পাবর কি না। তর সুন্দর চাঁদ মুখ অাবার দেখতে পারব কি না।যাক অাল্লাহ সহায়।
১২/০৬/১৯৯৮
অাজ তুই প্রথম হাটতে শিখলি। যদিও সারাদিন হামাগুড়ি দিয়ে ঘর মাতিয়ে রাখিস।
আজ অার পড়তে পারলেন না তপু সাহেব।বারান্দায় অনেকক্ষণ ধরে বসে অাছেন।
বাবা বাবা তুমি কাঁদছ কেন?পিছন থেকে ডাক দিয়ে উঠল তার ন'বছরের ছেলেটি।
কি উত্তর দিবেন তিনি?তবুও তিনি চোখ মুছে বললেন না বাবা কিছু না এমনি।মুখে শান্ত ভাব প্রকাশ করলেও ভিতরটা যেন দুমড়ে মুচরে যাচ্ছে।
কিছু দিন পর....
আজ তপু তুই আমাকে মা বলে ডাকলি!আহ!কি মধুর।অামার মাতৃত্ব আজ যেন স্বার্থক।
(৪)যে দিন তুই প্রথম ক্লাসে করতে গেলি সেদিন অামার অানন্দ দেখে কে!সময়ের প্রতিমহ কোল্ললে যখন তপু তই ফাইভে বৃত্তি পেলি সেদিন তুই অামাকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়েছিলি সেকথা অাজও অামার মনে পড়ে।এর পরেও কেটে যায় আরও পনেরটি বছর।তর বিয়ের বয়স হয়ে গেল যে।অাজ অামি বয়সের ভারে অক্ষম।চাঁদমুখ দেখে তর জন্য বৌ অানব যে।তর বিয়ের দিন ফুটফুটে বৌ দেখে অামার পরান জুড়িয়ে যায়।জানিস বাবা তো বাবাও বলত অামি নাকি খুব সুন্দরী ছিলাম।কিন্তু তর বাবা অামাকে তর কাছে রেখে চলে গেলেন। তর বাবার স্মৃতি অামি অাজও ভুলতে পারি না।সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।তোর বৌ অামাকে তর সামনে অকর্মা বলল।তুই চুপ করে ছিলি।তবুও অামি তোকে কিছু বলি নি।অামি চাই তুই ভাল থাক।তুই-ই তো অামার চোখের মনি।
(৫)
অাজ অামি কিছু লেখার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।তুই অামাকে কিভাবে বললি এই কথাটা?আমি বুড়ো আমার বিশ্রাম দরকার?বৃদ্ধাশ্রম অামার বিশ্রামের স্থান?আরে বাবা আমি কি করে তকে বুঝাবো অামি এবাড়িতেই ভাল অাছি এবং সবচেয়ে ভাল থাকব।তবুও অামি মুখ ফুটো কিছু বল নি। অামি চাই তুই ভাল থাক সবাইকে নিয়ে।
৪/২/১৪
সংঘত কারণেই অাজকের তারিখটা লিখে রাখলাম।অাজই তুই আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে অাসবি।আমি তোকে কোন বদ দোয়া দেই না আমি যে তর মা।আমি চাই তুই ভাল থাকিস।আজ তুই মস্ত বড় ডাক্তার।বাবা তুই অামারর শেষ ইচ্ছাটা পুরণ করিস।মরার পর কবরে মাটিটা অন্তত দিস।
(৬) ডাইরী পড়া শেষ করেন তপু সাহেব।চোখ থেকে অনবরত পানি ঝরছে।কিন্তু তাতে কিই বা আসে যায়।অসময়ের ফল যে তেতো হয়।গত বছর মারা গেছেন উনার মা।কবরের মাটিটাও দিতে পারেন নি ব্যস্ততার চাপে।অার দিবেই বা কিভাবে তিনি যে এক হতভাগ্য মায়ের অকৃতজ্ঞ সন্তান।
লিখা: Saif Uddin
Comments
Post a Comment