ভালবাসাটা তো এইরকমই বলতে হয় না,



হ্যালো বৃষ্টি...
-কি...
-রাগ করে আছ.....
-না....
-ব্যাপারটা অদ্ভুত না..
-আমার কাছে মনে হচ্ছে না....
-ভালবাসো আমাকে..????
-জানিনা.....
-সত্যি জানো না...
-না জানিনা....
-পালাবে আমার সাথে.....
-জানিনা....
-সকাল ১০টায় বাসার সামনে থাকবে ১১টায়
বিয়ে হবে আর ২.৩০এ আমরা বাস এ
থাকব....গন্তব্য অজানার উদ্দেশ্যে যাবে....
-না যাব না.....
-আচ্ছা আমি এসে অপেক্ষা করব তোমার
বাসার সামনে..
.
ফোনটা কেটে দিলাম..আমি জানি কাল কি
হবে..??ভালবাসলে মানুষ অনেক কিছু জানতে
পারে বা বুঝতে পারে...আমি চোখ বন্ধ করে
বলতে পারি কাল সকাল ১০টায় কালো একটা
শাড়ি পড়ে ঠিকি ওর বাসার সামনে
দাঁড়িয়ে থাকবে...আমার অপেক্ষা
করবে...কারণ এই বৃষ্টি নামের মেয়েটা
আমাকে অসম্ভব ভালবাসে....
.
বৃষ্টির বিয়ে ঠিক হয়েছে...তারিখ হল ১৫
জানুয়ারি আর আজ হল ৪জানুয়ারি...বৃষ্টি
বাবা আমার আর বৃষ্টি সম্পর্ক মেনে নেন নি
তাই তিনি আমাদের সম্পর্ক জানার সাথে
সাথে বৃষ্টির বিয়ে অন্য জায়গায় ঠিক করে
ফেলেছেন...এমনকি বৃষ্টি পরিষ্কার ভাবে
জানিয়ে দিয়েছেন আমার সাথে যেন কোন
প্রকার যোগাযোগ না রাখে তাই ২৫
ডিসেম্বর থেকে কিছুক্ষণ আগ পর্যন্ত বৃষ্টির
সাথে আমার কোন প্রকার যোগাযোগ
হয়নি...বৃষ্টি কিন্তু অনেক ফোন দিয়েছে কিন্তু
হয় আমি রিসিভ করি নি বা ফোন বন্ধ
ছিল....কি ভাবছেন আমি কিছুটা অদ্ভুত
টাইপের তাই না....হ্যাঁ কিছুটা হয়ত....
.
বৃষ্টির সাথে আমার রিলেশন আজ ৮বছর
হয়েছে...অনেক লং টাইম..অন্য কোন মেয়ে
হলে আমি সিওর আমাকে ৮বছর কেন ৮ঘন্টাও
থাকত না কিন্তু এই মেয়েটা ৮টা বছর আমাকে
ভালবেসেছে..সারা জীবন বৃষ্টি যে
আমাকে ভালবেসে এভাবেই যাবে সেটা
নিশ্চিত ভাবে গ্যারান্টি দিয়ে বলা
যায়....ওর সাথে মাঝে মাঝে আমার কয়েক
মাস কথা হয় না কিন্তু যখন ওকে ফোন দেই ওর
আমার উপর কোন অভিযোগ থাকে না কারণ ও
জানে আমি এইরকম আর এইরকমই থাকব...ওকে যদি
আমি এখন বিয়ে না করি বা কাল না যাই
তাহলে আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি ও
আর বাসায় ঢুকবে না সোজা হাটা ধরবে এবং
তার যে কোন একটা পছন্দের জায়গায় গিয়ে
বসে থাকবে.....
.
এখনো হয়ত এটা বলি নাই যে ওর সাথে আমার
পরিচয় কিভাবে হয়েছিল.....ssc এক্সাম
সামনে তাই অনেকটা জোর করে আমাকে
কোচিং এ ভর্তি করানো হয় যে ফেইল না
করি....কারণ পড়ালেখাতে আমার আগ্রহ নেই
বললেই চলে..ক্লাসে সবার পিছনে আমার
রোল থাকে এটা রিজার্ভ করা...তাই স্যার সহ
ফ্যামিলির সবাই চিন্তিত ছিলেন যে আমি
পাস করব কিনা তাই পাসের জন্য কোচিং এ
ভর্তি হওয়া....কোচিং এ আমি কারো সাথেই
কথা বলি না...ছেলেদের সাথেই কথা বলি
না,মেয়েদের সাথে আরো আগে না...কিন্তু
এই বৃষ্টি মেয়েটা সব সময় আমাকে লক্ষ্য করত
আমি ঠিকি দেখতাম তো কিছু বলতাম
না.....একদিন আমাকে বলল...
-এই তুমি এইরকম অদ্ভুত টাইপের কেন...(বৃষ্টি)
-কি রকম...
-চুপচাপ থাকো....ছেলেদের সাথেও কথা বল
না...
-ভাল লাগে না,,একা থাকার আলাদা মজা....
-আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করবে...
-না,,পরে প্রেম হয়ে যাবে....
-হিহিহি তাই নাকি....
-হ্যাঁ সেটাই...অধিকাং প্রেম এভাবেই শুরু হয়
সো আমাএ এসবে আগ্রহ নেই.....
-আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতেই হবে....
-আচ্ছা করলাম...অকে...
-হুম অকে...
.
সেইদিন থেকে ফ্রেন্ডশিপ শুরু তবে ভালবাসি
বলা হয়নি কখনো কাউকে...তবে জানি আমরা
একজন অপরজন কে নিজের থেকেও
ভালবাসি....ভালবাসাটা কিরকম অদ্ভুত
সম্পর্ক..কেউ কাউকে কিছু বলতে হয়
না,বোঝাতে হয় না তবুও একজন ঠিকি
আরেকজনের সব কথা বোঝে
ফেলে..ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং...
..ভাবলাম বৃষ্টি কে আরেকটা ফোন দেয়া
যাক...
.
-হ্যালো বৃষ্টি...
-কি???
-ডিসিশন কি নিলে....
-কিছু নেই নি...
-আমার সাথে পালাবে তাহলে...
-কে বলল....
-জানি পালাবে...তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে
পর....১০টায় আমি কিন্তু আসব....
ওকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে
দিলাম...জানি ও ফোন দিবে না..কারণ ও
জানে এখন আমাকে ফোন দিলেও কাজ হবে
না.....তবে একটা মেসেজ দিবে আমাকে
সেটা জানি..হ্যাঁ মেসেজ এসেছে অপেন না
করেই বলতে পারি মেসেজে কি লিখা
আছে.."নিজের খেয়াল রেখো আর
তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পর" গত ৮বছর ধরে
প্রতিদিন বৃষ্টি আমাকে এই মেসেজ দিয়ে
আসছে...
.
সকাল ১০টা...আমি বৃষ্টির বাসার
সামনে..বৃষ্টি আজ তেমন ভাবে সাজগোজ
করেনি কারণ হল ও তেমন সাজগোজ পছন্দ করে
না..আজ কালো একটা শাড়ি পরেছে আর
সাথে ম্যাচিং করে কালো কাচের চুড়ি
হাতে পরেছে..মুখে অল্প ক্রিম
দিয়েছে...এতেই বৃষ্টিকে রুপকথার রাজকন্যা
লাগছে....আমি রিকসায় বসা ছিলাম,বলতে হল
না বৃষ্টি ও আমার পাশে এসে বসল.....
.
দুপুর ১২টা কাজি অফিসে আমার বিয়ে হল
সাথে ফ্রেন্ড কয়েকটা ছিল...বিয়ের কাজ
তারাই সম্পর্ণ করেছে...বিকেল ২.৩০ আমি আর
বৃষ্টি বাসে বসে আছি...বৃষ্টি আমার কাধে
মাথা রেখে বাচ্চাদের মত মুখ করে বসে
আছে....
-মন খারাপ তোমার(আমি)
-জানিনা....(জানিনা)
-শেষ পর্যন্ত পালিয়েই বিয়ে করলাম।।
-হু...
-বলছিলে আসবে না....
-তুমি ভাল করেই জানতে আমি আসব কি না...
-হুম তা হয়ত...জানতাম....
-আচ্ছা আমরা এখন যাচ্ছি কোথায়...
-হয়ত অজানা কোন গন্তব্যে যেখানে আগে
যাওয়া হয়নি....যেমন ধরা যেতে পারে
কক্সবাজার....
বৃষ্টি আর কিছু বলল না,শুধু আমার কাধে আবার
মাথা রাখল..বাসের জানালার গ্লাস
খোলা ছিল তাই বাসাত ঢুকছে আর বৃষ্টি চুল
গুলো বার বার ওর মুখে এসে পরছিল কিন্তু ও
ঠিক করছে না..কারণ ও জানে এই চুল গুলা আমিই
ঠিক করে দিব বার বার আর বাতাস সে গুলো
আবার তার মুখে এনে ফেলবে....ভালবাসাটা
তো এইরকমই বলতে হয় না,বোঝাতে হয়
না..কিন্তু অন্য জন সবই বোঝে যায়....
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার......

Comments