সুসাইড নোট


ডাইরির উপরে তারিখ লিখে, জিসান
লিখছে...
কিন্তু কিছু লিখার আগেই তার দুচোঁখ
গড়িয়ে পানি পরছে। না জিসান কোন
ভালবাসা, জীবনের গল্প, বন্ধু বা
বান্ধবীদের সাথে ঘটে যাওয়া কোন
স্মরণীয় দিন নিয়ে লিখতে বসে নি।সে
লিখতে বসেছে তার মৃত্যুর জন্য লিখে
যাওয়া সুসাইড নোট।
দেখতে দেখতে জীবন থেকে ২১টি বছর
কেটে গেল। দুইটা পা শরীরটার অনেক ভার
বয়ে বেড়িয়েছে, পা দুইটা আজ যেমন
ক্লান্ত ব্যাক্তি জিসান তার চেয়েও বেশি
ক্লান্ত। জিসান লিখছে,
তোমরা আমার জন্য
অনেক করেছ, তোমাদের জন্য আজ আমার এই
পৃথিবীতে আসা। তোমাদের জন্যই আমি
২১টি বছর এই পৃথিবীতে কাটাতে পেরেছি।
তোমরা যদি আমাকে লালন-পালন না
করতে তাহলে আজকে আমি জিসান হতাম
না। এত দিন তোমাদের চোঁখের মণি
ছিলাম তাই বেচে থাকার একটা তৃষ্ণা ছিল,
জীবনে স্বপ্ন ছিল। কিন্তু বিশ্বাস কর আজ
তার ছিটে ফোটাও অবশিষ্ট নেই।
তোমরা আমার জন্য যা করেছ তার রিন
শোধ করার ক্ষমতা আমার নেই। তোমরা
আজ আমাকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছ
তাই আমি আর বাঁচতে চাই না। আর আমার মৃত্যুর
জন্য কেউ দায়ী নহে। আমি সম্পূর্ন সুস্থ
মাথায় আমার সিদ্ধান্তটা নিলাম।
রাত ২টা সবাই তখন হয়ত ঘুমে বিভোর। কে জানে হয়ত কেউ
স্বপ্নে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য
প্রান্তে ঘুরে রেড়াচ্ছে তার প্রিয়
মানুষটির হাতটি ধরে। কিন্তু জিসানের
কিছুতেই ঘুম আসছে না। বার বার তার
সাথে সকালে ঘটে যাওয়া ব্যাপারটার
কথা মনে পরছে যার জন্য সে আত্মহত্যার
সিদ্ধান্তটা নিয়েছে।
আজ জিসানের ঘুম ভাঙ্গতে একটু দেরি হয়ে গেছে,
যদিও জিসান একটু বেলা করেই ঘুম থেকে
উঠে তাই বলে ১০টা পর্যন্ত ঘুমায় না। বেশি
হলে ৯টা পর্যন্ত ঘুমায়। ঘুম থেকে উঠার
সাথে সাথেই জিসানের ফোন বেজে উঠে।
জিসানের আম্মা কল করেছে..
- হ্যালো
- হুম
- কি করিছ?
- আম্মা এইতো ঘুম থেকে উঠলাম।
- মাত্র উঠলি?
- হুম। তুমি কি কর?
- এইতো মাত্র খাইলাম
- আব্বা কই?
- তর বাপ শুয়ে আছে।
- ও আম্মা ভার্সিটিতে আবার টাকা দিতে
হবে।
- ওওও..... তর বাপেরে ফোন দিয়ে বলিস
- আচ্ছা ঠিক আছে
- তাহলে রাখি
- আচ্ছা
রিং হচ্ছে, জিসান তার আব্বাকে ফোন
দিয়েছে...
- হ্যালো আব্বা
- হুম বল
- টাকা কবে পাটাইবা?
- টাকার কোন খোঁজ নিতে পারিনি
- ভার্সিটিতে টাকা দেওয়া লাগবে
- এখন কিসের টাকা?
- পরীক্ষার
- কয়দিন আগে যে. .টুট টুট টু
ফোন কেটে গেল।
জিসানের আব্বা কল ব্যাক করেছে
- এই আমার কাছে কোন টাকা পয়সা
চাইবি না। কোন টাকা পয়সা আমি দিতে
পারব না। ফোন রাখ
জিসান ফোন রেখে দিল।
একটু পর আবার জিসানের আম্মা ফোন দিল...
জিসানের আম্মা ফোন দিয়ে
কান্নাকাটি করছে। জিসান টাকা চেয়েছে
বলে তার বাবা নাকি বকাবকি করছে।
জিসান শুধু চুপ করে শুনছে। জিসানের
মায়ের শেষ কথা পড়াশোনার দরকার নেই
একটা চাকরি-বাকরির ব্যাবস্থা কর। বলে
ফোনটা রেখে দেয়।
পড়াশোনা করা লাগবে না শুনেই
জিসান আর চোঁখের পানি ধরে রাখতে
পারেনি। তার চোখে ভাসছে
ক্যাম্পাসের প্রিয় মুখ গুলো, গত
সেমিস্টার গুলোর রেজাল্ট। তার ভাবতেই
কষ্ট হচ্ছে সে আর পড়াশোনা করতে পারবে
না। কত স্বপ্ন ছিল? পড়াশোনাটা শেষ
করবে। কিন্তু আজ তার চোখের সামনে
তার স্বপ্নটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।
সে কিছুই করতে পারছে না। জিসানের
আম্মা বার বার বলে চাকরি নিতে কিন্তু
আজ প্রায় দেড় বছর যাবত চেষ্টা করে
যাচ্ছে চাকরি আর হচ্ছে না। আসলে এখন যা
অবস্থা রেফারেন্স ছাড়া কোন চাকরি হয়
না। জিসানের কোন রেফারেন্স নেই তাই
তার চাকরিও নেই।
জিসান টেবিলে বসে আছে, হাতে বিষের
বোতল একটু পর সে আত্মহত্যা করবে। তার
আগে সে কিছুক্ষন বুক ভরে এই পৃথিবীর শেষ
নিশ্বাস নিবে।
জিসান বসে বসে ভাবছে,
এই বুঝি আব্বা এসে আমার দরজার ওপাশ
থেকে বলবে-
জিসান জিসান জিসান.........
ঘুমিয়ে পরেছিস বাবা?
- আমি দরজা খুলে দিয়ে বলব না আব্বা
ঘুমাইনি।
- আব্বা এসে আমাকে পাশে বসিয়ে ভাত
খাইয়ে দিয়ে বলবে বাবা আসলে আমি
টাকা পয়সার খুব সমস্যায় আছি। ঠিক এই
সময়ে তুই আমাকে টাকার কথা বললি।মাথা
ঠিক ছিলনা, তুই চিন্তা করিস না। আমি
যেইভাবে পারি টাকার ব্যাবস্থা করব।
কথা গুলো শুনে আমি আব্বার গলা জরিয়ে
ধরে কাঁদব আর বলব আব্বা তুমি কি আমাকে
একটি বারের জন্য বুঝিয়ে বলতে পারলে
না? কেন আব্বা আমি কি তোমার ছেলে
না? তুমি বললে আমি বুঝতাম না?
কল্পনা তো কল্পনাই, তার আব্বা রুমে
আসবে কি করে? জিসান তো বাড়ির বাহিরে
থাকে। কিন্তু একটা ফোনতো তার
বাবা দিতে পারত?
না জিসান আর সহ্য করতে পারছে না। গলার
মধ্যে বিষের বোতলের পুরোটাই ঢেলে
দিল। কিছুক্ষনের মধ্যে হয়ত জিসান মারা
যাবে। কিন্তু একি জিসানের ফোন
বাজছে, তার মা ফোন দিয়েছে..
- হ্যালো, জিসান আমাদের বাড়ির পাশে
যে জমিটা ছিলনা? ঐটা তোর বাপে
বিক্রি করে দিয়েছে, তোর পড়াশোনার
জন্য। আর সকালে তোর বাপের মন মেজাজ
ভালছিল না তাই বকাবকি করেছে। আর
জমি বিক্রির টাকা আমার কাছেই রেখেছে
কাল পাটিয়ে দিব। তুই টেনশন করিস না
মন দিয়ে পড়াশোনা কর।
- কিন্তু আম্মা..! জিসান হাউমাউ করে
কেদে দিয়ে বলে---
আম্মা তুমি কথা গুলো বলতে অনেক দেরি
করে ফেলেছ। আম্মা আমি বিষ খেয়ে
ফেলেছি। আম্মা আমি বাঁচতে চাই। আম্মা
আমি বাঁচতে চাই। আমাকে বাচাঁও....
- ও মায়াগো কখনও বিষ খাইলি? একটা
বুকফাটা চিৎকার ঐ প্রান্ত থেকে ভেসে
আসে...... cry emoticon cry emoticon cry emoticon
বি.দ্র: আমরা যেন কেউ এমন ঘৃনিত পথের দিকে পা না বাড়াই। লাইফটা আপনার কিন্তু আত্মহত্যার অধিকার আপনার নেই। আপনার জীবনে পদি স্ট্রাগল পার্ট নাই থাকে, তাহলে আপনার কিসের জীবন?? স্ট্রাগল পার্টটা পার করে দেখুন কত সুন্দর!! ভবিষ্যত হয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
[সমাপ্ত]

Comments