কালজয়ী পর্ব-২

-ড.মুহাম্মদ রেজাউল করিম
দুনিয়ার জীবনে সৃষ্টিকর্তার যথাযথ প্রতিনিধিত্বের জন্য প্রয়োজন সৃষ্টি এবং স্রষ্টা সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান। এ জন্য হাদীসে বলা হয়েছে- Óমান আরাফা নাফসাহু ফাক্বাদ আরাফা রাব্বাহু” সক্রেটিসের উক্তি “নো দ্যা সেলফ” নিজেকে জানার মধ্যে দিয়ে মুলত আল্লাহকে চেনা যায়। কিন্তু মানুষ আল্লাহর ‘আবদ বা দাস’ হওয়ার পরিবর্তে যখন ক্ষমতাবানদের দাসে পরিণত হয় তখন তার পক্ষে সৃষ্টি কর্তার নির্দেশ পালন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এজন্য তাফহীমুল কুরআনে বলা হয়েছে “যে ব্যক্তি কারো অধিকারের আওতাধীনে তারই অর্পিত ক্ষমতা-ইখতিয়ার ব্যবহার করে তাকে বলে। খলীফা নিজে মালিক নয় বরং আসল মালিকের প্রতিনিধি। সে নিজে ক্ষমতার অধিকারী নয় বরং মালিক তাকে ক্ষমতার অধিকার দান করেছেন, তাই সে ক্ষমতা ব্যবহার করে। সে নিজের ইচ্ছে মতো কাজ করার অধিকার রাখে না। বরং মালিকের ইচ্ছে পূরণ করাই হয় তার কাজ। যদি সে নিজেকে মালিক মনে করে বসে এবং তার ওপর অর্পিত ক্ষমতাকে নিজের ইচ্ছে মতো ব্যবহার করতে থাকে অথবা আসল মালিককে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে মালিক বলে স্বীকার করে নিয়ে তারই ইচ্ছে পূরণ করতে এবং তার নির্দেশ পালন করতে থাকে, তাহলে এগুলো সবই বিদ্রোহ ও বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে গণ্য হবে”।
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে বলা হয়েছে-বলোঃ হে আল্লাহ! বিশ্ব –জাহানের মালিক! তুমি যাকে চাও রাষ্ট্রক্ষমতা দান করো এবং যার থেকে চাও রাষ্ট্রক্ষমতা ছিনিয়ে নাও। যাকে চাও মর্যাদা ও ইজ্জত দান করো এবং যাকে চাও লাঞ্জিত ও হেয় করো। কল্যাণ তোমরা হাতেই নিহিত। নিসন্দেহে তুমি সবকিছুর ওপর শক্তিশালী। ÓSay, "O Allah , Owner of Sovereignty, You give sovereignty to whom You will and You take sovereignty away from whom You will. You honor whom You will and You humble whom You will. In Your hand is [all] good. Indeed, You are over all things competent.
মানুষ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুমের তাবেদারী করবে সৃষ্টির নয়। আল্লাহর পরম সমৃদ্ধি, শক্তি সত্তা, মর্যাদা ও প্রজ্ঞার কথা যখন বান্দার মনে আসে তখন তাঁকেই কেবলমাত্র ‘আল্লাহ’ বলে মনে হয়, অন্য কেহ তাঁর সমকক্ষ নেই। তিনি এক এবং অদ্বিতীয়।“আজ রাজত্ব কার?” (আল্লাহ নিজেই নিজের প্রশ্নের উত্তর দিবেন)। আল্লাহর- যিনি একক, মহাপরাক্রমশালী!” (৪০:১৬)ÒTo whom belongs [all] sovereignty this Day? To Allah, the One, the Prevailing.”
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে বলা হয়েছে- “আলা লাহুল খালক্ব অল আমর” দুনিয়ার প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর রাজাধিরাজ একচ্ছত্র ক্ষমতার ঘোষণা এবং তার বাস্তবায়ন করা। আপনার জানা মতে তাঁর সমকক্ষ কোন সত্তা আছে কি? ÒDo you know of any similarity to Him?. (১৯:৬৫) বিশ্বজাহানের কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়। তিনি সব কিছু শোনেন ও দেখেন।” ÒThere is nothing like unto Him, and He is the Hearing, the Seeing. (৪২:১১) যখন দয়া, যতœ, সাহায্য, ¯েœহ-মমতা ও অনুকম্পার কথা মনে আসে তখন ‘আল্লাহ নাম মনে পড়ে। আল্লাহ বলেন-আর তোমাদের নিকট যত নি’য়ামত রয়েছে সবই আল্লাহ্র পক্ষ থেকে।” (১৬-সূরা আন নাহল : আয়াত-৫৩) ÒAnd whatever you have of favor-it is from Allah.”
আল্লাহ্ হলেন মর্যাদা, মাহাতœ্য ও শক্তিমত্তায় অধিকারী। “যদি তুমি আল্লাহ্র নি’য়ামতরাজিকে গণনা করতে চাও তবে তা তুমি কখনও গণনা করে শেষ করতে পারবে না। (১৪:৩৪)ÒAnd if you should count the favor of Allah, you could not enumerate them.”
এজন্য সূরা আর রাহমানে অসংখ্যবার বলা হয়েছে- সুতরাং (হে জ্বীন ও ইনসান জাতি!) তোমরা উভয় জাতি তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?” smile emoticon আয়াত-১৩) ÒSo which of the favors of your Lord would you deny?” তিনি তোমাদের উপর তাঁর প্রকাশ্য ও গোপন নি’য়ামতসমূহ পূর্ণ করে রেখেছেন।” (৩১:২০)Òand amply bestowed upon you His favors, [both]”
মুলত লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সা:) মুখে এই ঘোষনা বা স্বীকৃতি প্রদানের নামই হল কালেমা। ”অথাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল। আর এই মৌলিক ঘোষনা পত্রের আলোকে মনেপ্রানে সাতটি বিষয়ের স্বীকৃতি দেয়ার নামই ঈমান বা বিশ্বাস। বাস্তব জীবনে কালেমার আসল রূপটির নামই আমল বা কাজ।
কিন্তু আমাদেও সমাজে আমল বা কাজ বলতে বুঝায় কতগুলো তসবিহ তাহলিল। তার মানে যিনি এই কয়েকটি শব্দ উচ্চারণ করলেন তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শক্তির কাছে আতœসমর্পন করলেন। বাকী সকল শক্তিকে অস্বীকার করলেন। আর ঘোষনার সাথে সাথে ঐ সমাজের মধ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রে অধিষ্টিত আল্লাহ বিরোধী তাগুতি শক্তির সাথে অ-ষোষিত যুদ্ধেও সুচনা হয়ে গেল। “লং লাইফ বেটেল”ঈমানের অর্থ হচ্ছে জানা এবং মেনে নেয়া। যে ব্যক্তি আল্লাহর একত্ব, তাঁর সত্যিকার গুণরাজি, তাঁর কানুন এবং তাঁর পুরস্কার ও শাস্তি সম্পর্কে জানে এবং দিলের মধ্যে তৎসম্পর্কে প্রত্যয় পোষণ করে, তাকে বলা হয় মুমিন এবং ঈমানের ফল হচ্ছে এই যে, তা মানুষকে মুসলিম অর্থাৎ আল্লাহর অনুগত ও আজ্ঞাবহ করে তোলে।
চলবে.........

Comments