Fan Page
কয়েকটা টিভি চ্যানেলে চাকরির এপ্লিকেশন করার পর অবশেষে একটা টিভি চ্যানেল থেকে ডাক পেলাম ইন্টারভিও দেওয়ার জন্য।
খুব সকাল সকাল নাস্তা করে চাকরির ইন্টারভিও দিতে রওয়ানা হলাম। জীবনের প্রথম টিভি চ্যানেলে ইন্টারভিত দিতে যাচ্ছি তাই নিজের ভিতর একটু নার্ভাস ফিল হচ্ছে। জানিনা কি কি প্রশ্ন করে আর প্রস্তুতিও নেওয়া হয়নি সেই ব্যাপারে। যাই হোক কোন চিন্তা না করে খুব সকালেই সবার আগেই টিভি অফিসে গিয়ে আমি হাজির। গিয়ে দেখি অনেক লোক এসেছে আমার মতো ইন্টারভিও দেওয়ার জন্য। আবার কিছু সুন্দরী ললনাদেরকেও দেখা গেল। তবে সবাই অনেক সাজুগুজু করে এসেছে আমি ছাড়া। আমি সাধারণ ড্রেস পড়েই চলেগিয়েছিলাম। ছেলেরা বেশিরভাগই কোড টাই পড়ে এসেছে।
টিভির অফিসে ওয়েটিং রুমে সবাইকে বসার জন্য দিল। ১০ঃ৩০ মিনিট থেকে একজন একজন করে ভিতরে ডাক পড়তেছে। আমি একটু তাড়া করতেছিলাম কখন আমার নাম ডাকবে। কয়েকজন যাবার পরেই আমার নাম ডাকল। হঠাত বুকের ভেতরে একটু কম্পন অনুভূত হলো
এই মেডিয়াতে প্রথম ইন্টারভিও বলে কথা। যাইহোক বুকে সাহস নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম। একজন মেয়ে আমাকে ইন্টারভিউ রুমে নিয়েগেল।
.
প্রথমেই আমাকে ৩০ মিনিট সময় দিয়েছে কম্পিউটারে টাইপিং করার জন্য। আমাকে কম্পিউটারে বসিয়ে হাতে লিখা একটা নিউজ এর কাগজ দিল। শিরোনামঃ গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবের মাজার নিয়ে রিপোর্টিং করা। যাইহোক ৩০ মিনিট শেষ হবার আগেই আমার টাইপিং স্পিড ভাল দেখে থামিয়ে দিয়ে বলল আপনি মাননীয় শেখ হাসিনার কাছে একটা চিঠি লিখেন দরিদ্র শিশুদের সাহায্যের জন্য। যদিও আমি একজন পাক্কা কম্পিউটার অপারেটর কিন্তু পাশে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে যখন আমার টাইপিং দেখছিল তখন নিজের কাছে আনইজি ফিল লাগছিল। হাত কাপছিল। টাইপ করতে অসুবিধা হচ্ছিল দেখে উনাদেরকে বললাম যদি মাইন্ড না করেন আমাকে একটু একা কাজ করতে দিন।
উনারা বলল না আমাদের সামনেই টাইপ করেন। যেই কথা সেই কাজ। চিঠি লিখার শেষ করে আমার নাম ও মোবাইল নাম্বার ফাইলে লিখে সেভ দিয়ে আরেকটা রুমে গিয়ে বসলাম।
৩ ঘন্টা পরে আবার যাচাই বাছাই করে যাদেরকে সিলেক্ট করছে তাদেরকে অন্য রুমে নিয়ে আলাদা বসাল। আমাকেও সেই রুমে নিছে। বুজতে পারলাম প্রাথমিক পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি।
এইবার আমাকে ২য় নাম্বারে কল করেছে মৌখিক পরিখা দেওয়ার জন্য। যাইহোক সকল বাধা উপেক্ষা করে সালাম দিয়ে রুমে ডুকলাম।
-আসসালামু আলাইকুম, আসতে পারি স্যার?
-জি আসুন।
-গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম দেখে ৩জনের মাঝখান থেকে একজন আমাকে বলল আপনি সিটে বসুন।
-ধন্যবাদ স্যার
-আপনার সিভি আর কাগজপত্রগুলো দিন।
-এইযে স্যার নিন।
-১ম ব্যক্তিঃ আচ্ছা আপনার গ্রামের বাড়ি কোথায়?
-ব্রাহ্মণবাড়িয়া
-আচ্ছা বলুনতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন বিখ্যাত কবির নাম ও বি.বাড়িয়ার আওয়ামিলীগের জেলা সভাপতির নাম বলুন?
- ১। আল মাহমুদ, ২। স্যার জানি না।
-২য় ব্যক্তিঃ আচ্ছা বলুনতো বাংলাদেশ বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের কোন দুইজন নেতার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। বলতে হবে কে কোন পদে নিযুক্ত আছেন?
-১। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, যদিও সে ঢাকা থেকে নির্বাচন করেছে কিন্তু তার এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
-৩য় ব্যক্তিঃ আচ্ছা বলুনতো শেখ মুজিবকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি দেয়া হয়
কবে?
-২৩ ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯ সালে
-শেখ মুজিবকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি কে দেন?
-তোফায়েল আহম্মেদ
-শেখ মুজিব আনুষ্ঠানিকভাবে কবে ছয়দফা ঘোষনা করেন?
-২৩ মার্চ ১৯৬৬
-অাগুনের পরশমণি উপন্যাসের লেখক কে?
-হুমায়ুন অহমেদ।
-বাংলাদেশের প্রথম স্যাটালাইট চ্যানেল কোনটি এবং কতসালে স্থাপিত হয়?
-বাংলাদেশের প্রথম স্যাটালাইট চ্যানেল এটিএন বাংলা (১৯৯৭)।
-বাংলাদেশ টেলিভিশনের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্র ২ টি কোথায়?
স্যার মনে পড়ছে না।
এইবার আপনি আসতে পারেন।
ধন্যবাদ স্যার।
।
বাহিরে গিয়ে একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললাম। এরা আমার ইন্টারভিউ না রিমান্ড নিচ্ছিল সেইটা তখন টের পাচ্ছিলাম। প্রশ্নগুলো যদিও মোটামুটি কঠিন ছিল এরপরেও ১টা ছাড়া বাকিগুলোই সঠিক দিয়েছি। কিন্তু যেইটা আমাকে অবাক করেছে সেইটা হলোঃ কম্পিউটার টাইপিং ও ইন্টারভিউ মিলিয়ে পুরাই চেতনার উপর পরিক্ষা হলো। একটা প্রশ্নও আওয়ামিলীগ ও চেতনার বাহির থেকে করল না!
।
ইন্টারভিওর ১৫দিন পড়ে টিভি চ্যানেলের অফিস থেকে আমার ঠিকানায় চাকরির জয়েন লেটার আসল। আমিত খুশিতে বাকবাকুম
বাসায় মিষ্টি বিতরনের কাজও শেষ
চাকরিতে জয়েনের আগেরদিন আমাকে ফোন করে বলতেছে একজন যে, স্যার আমরাতো অনেককেই জয়েন লেটার পাঠিয়েছি কিন্তু সবাইকে নেওয়া হবে না। আপনি যদি আমাকে ৩ লক্ষ টাকা দিতে পারেন তাহলে আপনার চাকরি কনফার্ম ...
এই কথা শুনে আকাশ থেকে মাটিতে পড়েগেলাম। এত ভাল একটা চাকরি হয়েগিয়েছে এখন বলতেছে ৩ লক্ষ টাকা না দিলে আমার জায়গায় অন্যজন চাকরি পেয়ে যাবে। আর আমার বাবাও এত টাকা দিতে পারবে না কারণ আমি গ্রামের একটা সাধারণ গরিব ঘরের গরিব মা-বাবার সন্তান।
অবশেষে চাকরির আশা ছেড়েই দিলাম কারণ যেইখানে আমাকে সবকিছুই মুক্তিযুদ্ধ, আওয়ামিলীগ ও রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন করে সেইখানে আমার চাকরি হবে না সেইটা আগেই বুঝার উচিত ছিল!
জয় বাংলা, জয় চেতনা।
[বিঃ দ্রঃ কেউ টিভি চ্যানেলের নাম জানতে চাহিয়া লজ্জা দিবেন না। নিজ থেকে বুজে নিয়েন কোন চ্যানেল হতে পারে।]
কয়েকটা টিভি চ্যানেলে চাকরির এপ্লিকেশন করার পর অবশেষে একটা টিভি চ্যানেল থেকে ডাক পেলাম ইন্টারভিও দেওয়ার জন্য।
খুব সকাল সকাল নাস্তা করে চাকরির ইন্টারভিও দিতে রওয়ানা হলাম। জীবনের প্রথম টিভি চ্যানেলে ইন্টারভিত দিতে যাচ্ছি তাই নিজের ভিতর একটু নার্ভাস ফিল হচ্ছে। জানিনা কি কি প্রশ্ন করে আর প্রস্তুতিও নেওয়া হয়নি সেই ব্যাপারে। যাই হোক কোন চিন্তা না করে খুব সকালেই সবার আগেই টিভি অফিসে গিয়ে আমি হাজির। গিয়ে দেখি অনেক লোক এসেছে আমার মতো ইন্টারভিও দেওয়ার জন্য। আবার কিছু সুন্দরী ললনাদেরকেও দেখা গেল। তবে সবাই অনেক সাজুগুজু করে এসেছে আমি ছাড়া। আমি সাধারণ ড্রেস পড়েই চলেগিয়েছিলাম। ছেলেরা বেশিরভাগই কোড টাই পড়ে এসেছে।
টিভির অফিসে ওয়েটিং রুমে সবাইকে বসার জন্য দিল। ১০ঃ৩০ মিনিট থেকে একজন একজন করে ভিতরে ডাক পড়তেছে। আমি একটু তাড়া করতেছিলাম কখন আমার নাম ডাকবে। কয়েকজন যাবার পরেই আমার নাম ডাকল। হঠাত বুকের ভেতরে একটু কম্পন অনুভূত হলো
এই মেডিয়াতে প্রথম ইন্টারভিও বলে কথা। যাইহোক বুকে সাহস নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম। একজন মেয়ে আমাকে ইন্টারভিউ রুমে নিয়েগেল।
.
প্রথমেই আমাকে ৩০ মিনিট সময় দিয়েছে কম্পিউটারে টাইপিং করার জন্য। আমাকে কম্পিউটারে বসিয়ে হাতে লিখা একটা নিউজ এর কাগজ দিল। শিরোনামঃ গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবের মাজার নিয়ে রিপোর্টিং করা। যাইহোক ৩০ মিনিট শেষ হবার আগেই আমার টাইপিং স্পিড ভাল দেখে থামিয়ে দিয়ে বলল আপনি মাননীয় শেখ হাসিনার কাছে একটা চিঠি লিখেন দরিদ্র শিশুদের সাহায্যের জন্য। যদিও আমি একজন পাক্কা কম্পিউটার অপারেটর কিন্তু পাশে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে যখন আমার টাইপিং দেখছিল তখন নিজের কাছে আনইজি ফিল লাগছিল। হাত কাপছিল। টাইপ করতে অসুবিধা হচ্ছিল দেখে উনাদেরকে বললাম যদি মাইন্ড না করেন আমাকে একটু একা কাজ করতে দিন।
উনারা বলল না আমাদের সামনেই টাইপ করেন। যেই কথা সেই কাজ। চিঠি লিখার শেষ করে আমার নাম ও মোবাইল নাম্বার ফাইলে লিখে সেভ দিয়ে আরেকটা রুমে গিয়ে বসলাম।
৩ ঘন্টা পরে আবার যাচাই বাছাই করে যাদেরকে সিলেক্ট করছে তাদেরকে অন্য রুমে নিয়ে আলাদা বসাল। আমাকেও সেই রুমে নিছে। বুজতে পারলাম প্রাথমিক পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি।
এইবার আমাকে ২য় নাম্বারে কল করেছে মৌখিক পরিখা দেওয়ার জন্য। যাইহোক সকল বাধা উপেক্ষা করে সালাম দিয়ে রুমে ডুকলাম।
-আসসালামু আলাইকুম, আসতে পারি স্যার?
-জি আসুন।
-গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম দেখে ৩জনের মাঝখান থেকে একজন আমাকে বলল আপনি সিটে বসুন।
-ধন্যবাদ স্যার
-আপনার সিভি আর কাগজপত্রগুলো দিন।
-এইযে স্যার নিন।
-১ম ব্যক্তিঃ আচ্ছা আপনার গ্রামের বাড়ি কোথায়?
-ব্রাহ্মণবাড়িয়া
-আচ্ছা বলুনতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন বিখ্যাত কবির নাম ও বি.বাড়িয়ার আওয়ামিলীগের জেলা সভাপতির নাম বলুন?
- ১। আল মাহমুদ, ২। স্যার জানি না।
-২য় ব্যক্তিঃ আচ্ছা বলুনতো বাংলাদেশ বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের কোন দুইজন নেতার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। বলতে হবে কে কোন পদে নিযুক্ত আছেন?
-১। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, যদিও সে ঢাকা থেকে নির্বাচন করেছে কিন্তু তার এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
-৩য় ব্যক্তিঃ আচ্ছা বলুনতো শেখ মুজিবকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি দেয়া হয়
কবে?
-২৩ ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯ সালে
-শেখ মুজিবকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি কে দেন?
-তোফায়েল আহম্মেদ
-শেখ মুজিব আনুষ্ঠানিকভাবে কবে ছয়দফা ঘোষনা করেন?
-২৩ মার্চ ১৯৬৬
-অাগুনের পরশমণি উপন্যাসের লেখক কে?
-হুমায়ুন অহমেদ।
-বাংলাদেশের প্রথম স্যাটালাইট চ্যানেল কোনটি এবং কতসালে স্থাপিত হয়?
-বাংলাদেশের প্রথম স্যাটালাইট চ্যানেল এটিএন বাংলা (১৯৯৭)।
-বাংলাদেশ টেলিভিশনের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্র ২ টি কোথায়?
স্যার মনে পড়ছে না।
এইবার আপনি আসতে পারেন।
ধন্যবাদ স্যার।
।
বাহিরে গিয়ে একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললাম। এরা আমার ইন্টারভিউ না রিমান্ড নিচ্ছিল সেইটা তখন টের পাচ্ছিলাম। প্রশ্নগুলো যদিও মোটামুটি কঠিন ছিল এরপরেও ১টা ছাড়া বাকিগুলোই সঠিক দিয়েছি। কিন্তু যেইটা আমাকে অবাক করেছে সেইটা হলোঃ কম্পিউটার টাইপিং ও ইন্টারভিউ মিলিয়ে পুরাই চেতনার উপর পরিক্ষা হলো। একটা প্রশ্নও আওয়ামিলীগ ও চেতনার বাহির থেকে করল না!
।
ইন্টারভিওর ১৫দিন পড়ে টিভি চ্যানেলের অফিস থেকে আমার ঠিকানায় চাকরির জয়েন লেটার আসল। আমিত খুশিতে বাকবাকুম
বাসায় মিষ্টি বিতরনের কাজও শেষ
চাকরিতে জয়েনের আগেরদিন আমাকে ফোন করে বলতেছে একজন যে, স্যার আমরাতো অনেককেই জয়েন লেটার পাঠিয়েছি কিন্তু সবাইকে নেওয়া হবে না। আপনি যদি আমাকে ৩ লক্ষ টাকা দিতে পারেন তাহলে আপনার চাকরি কনফার্ম ...
এই কথা শুনে আকাশ থেকে মাটিতে পড়েগেলাম। এত ভাল একটা চাকরি হয়েগিয়েছে এখন বলতেছে ৩ লক্ষ টাকা না দিলে আমার জায়গায় অন্যজন চাকরি পেয়ে যাবে। আর আমার বাবাও এত টাকা দিতে পারবে না কারণ আমি গ্রামের একটা সাধারণ গরিব ঘরের গরিব মা-বাবার সন্তান।
অবশেষে চাকরির আশা ছেড়েই দিলাম কারণ যেইখানে আমাকে সবকিছুই মুক্তিযুদ্ধ, আওয়ামিলীগ ও রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন করে সেইখানে আমার চাকরি হবে না সেইটা আগেই বুঝার উচিত ছিল!
জয় বাংলা, জয় চেতনা।
[বিঃ দ্রঃ কেউ টিভি চ্যানেলের নাম জানতে চাহিয়া লজ্জা দিবেন না। নিজ থেকে বুজে নিয়েন কোন চ্যানেল হতে পারে।]
Comments
Post a Comment