টাঙ্গুয়ার হাওড় দিনে কি রাতে...

SaiF UddiN
Image result for টাঙ্গুয়ার হাওড় দিনে কি রাতে...

সময়সচেতন জীবনধারা থেকে বেরিয়ে কখনো কখনো ফিরে যেতে ইচ্ছে করে প্রকৃতির কোলেমনে হয়, যেন প্রকৃতির নীরবতায় শরীরটাকে একটু এলিয়ে দিলেই দূর হবে সব ক্লান্তিকারো কাছে হয়তো পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে লুকানো সৌন্দর্য আবিষ্কারেই পরিপূর্ণ আনন্দ, আবার কারো কাছে হয়তো নিজেকে হালকা করতে সমুদ্রের বাঁধভাঙা ঢেউয়ের গর্জনই সইতবে যে যা-ই বলুক, প্রকৃতির নিসর্গের মাঝে হাওড়ের নান্দনিকতা যেন বরাবরই একটু বেশি
Image result for tanguar haor

টাঙ্গুয়ার হাওড়, মেঘালয়ের কোলঘেঁষে জন্ম নেয়া এ হাওড়ের সৌন্দর্যের কাছে যেন হার মানে প্রকৃতির অনেক নিসর্গবর্ষায় হাওড়ে পানির রাজত্ব চললেও হিম হিম শীতে ভিন্ন এক রূপের ডালি মেলে ধরে এ হাওড়ঘন কুয়াশায় স্ফটিক স্বচ্ছ নীল জল আর তাতে ভেসে বেড়ানো হাজারো পাখির কলতানে মুখর হয়ে ওঠে এক স্বপ্নিল জগৎশীতের সময়টায় হাওড়ের বিভিন্ন জায়গায় পানি কমতে থাকায় অনেক কান্দা বা পাড় জেগে ওঠেফলে পুরো হাওড় ভাগ হয়ে যায় অনেকগুলো বিলেতখন শুধু বিলেই পানি থাকেশীতের শুরু থেকে শেষ অবধি এ হাওড় পরিণত হয় পাখির এক স্বর্গরাজ্যেএসব পাখির বেশির ভাই পরিযায়ী, হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এখানে এসে কিছুদিনের জন্য আবাস গড়ে তারাপানকৌড়ি, বেগুনি কালেম, বালিহাঁস, শঙ্খচিল, বক, সারস, পাতি কুট, সরালি হাঁস, ডাহুক, লাল বুক গুরগুরি, নেউ পিপি, কায়েম, দলপিপি, কুট, লাল ঢেঙ্গা, কালো মাথা গাঙচিল, খয়রা মাথা গাঙচিল, কুরা, বড় চিত্রা ঈগল, তিলা নাগ ঈগলকত নামের যে পাখির দেখা মেলে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই

Image result for tanguar haor

টাঙ্গুয়ার হাওড় কোথায়

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলায় অবস্থিত এ হাওড়ের পাড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ভারতের মেঘালয়ের বিশাল পাহাড়হাওড়ের সীমানা টেনে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি গাছনলখাগড়া, দুধিলতা, নীল শাপলা, পানিফল, শোলা, হেলেঞ্চা, শতমূলি, শীতলপাটি, স্বর্ণলতা, বনতুলসীসহ কতই নাম তাদের২০০ প্রজাতিরও বেশি গাছগাছালির দেখা মিলবে এ হাওড়েএককথায় বলতে গেলে হাওড়ের স্বচ্ছ পানি, চারপাশের সবুজ প্রকৃতি আর ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির কলতান, প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে টেনে চলেছে অবিরাম


Image result for tanguar haor

কোথায় থাকবেন
সুনামগঞ্জে থাকার জন্য বেশকিছু হোটেল রয়েছেএসব হোটেলের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলঃ
  • হোটেল নুর, পূর্ব বাজার স্টেশন রোড;
  • হোটেল নুরানী, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন রোড;
  • হোটেল প্যালেস, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন রোড;
  • সুরমা ভ্যালী আবাসিক রিসোর্ট;
Image result for tanguar haor

কীভাবে যাবেন

প্রকৃতির এ নিসর্গে যারা হারিয়ে যেতে চান, এ মুহূর্তে তাদের মনে হয়তো একটি প্রশ্নই উঁকি দিচ্ছে, কীভাবে যাব টাঙ্গুয়ার হাওড়েঢাকার ফকিরাপুল কিংবা সায়েদাবাদ থেকে যেকোনো পরিবহনের বাসে চড়ে প্রথমে যেতে হবে সিলেটের সুনামগঞ্জ শহরেনন এসি বাসে গেলে খরচ পড়বে ৪০০-৪৫০ টাকাএবার সুনামগঞ্জ পৌঁছে বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশায় যেতে হবে সাহেববাজার ঘাটসাহেববাজার ঘাট থেকে হাওড়ের উদ্দেশে সরাসরি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়ইঞ্জিনচালিত নৌকায় গেলে খরচ হবে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকাআর যদি রিজার্ভ ট্রলার নিতে চান, তবে খরচ হবে সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকাবলে রাখা ভালো, এখানে কিন্তু দরকষাকষির সুযোগ আছেচাইলে স্পিড বোটেও যেতে পারেনকিন্তু সেক্ষেত্রে আপনাকে ইঞ্জিন বোটের চেয়ে একটু বেশি ভাড়া গুনতে হবেতবে একটা সুবিধা তো আছেই, গন্তব্যে পৌঁছতে বেঁচে যাবে অনেকখানি সময়

Image result for tanguar haor


শীতের সময়টায় টাঙ্গুয়ার হাওড়ে পৌঁছতে হলে সাহেববাজার ঘাট থেকে সবার আগে যেতে হবে মণিপুরি ঘাটেনৌকায় জনপ্রতি ভাড়া ৫ টাকামণিপুরি ঘাটে পৌঁছার পর পরবর্তী গন্তব্য হল তাহিরপুরএখানে যেতে মোটরবাইকই একমাত্র ভরসাএখানে জনপ্রতি খরচ পড়বে ২০০-২৫০ টাকাএর পর নৌকায় টাঙ্গুয়ার হাওড়তাহিরপুর থেকে টাঙ্গুয়ার হাওড়ের দূরত্ব খুব বেশি নয়তাই সাহেববাজার ঘাটের তুলনায় তাহিরপুর থেকে হাওড়ের ভাড়া অনেক কমতাহিরপুর থেকে টাঙ্গুয়ার হাওড়ে পৌঁছতে সময় লাগে এক-দেড় ঘণ্টা


কি করবেন :



  • টাঙ্গুয়ার হাওড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নৌকা ভাড়া করে দেখতে পারেনএখানকার পানি এতটাই স্বচ্ছ যে আপনি জলভুমির তলদেশও দেখতে পারবেন
  • সাথে করে অবশ্যই ক্যামেরা নিয়ে যাবেন
  • এখানকার বিভিন্ন প্রজাতির পাখীদের কিচিরমিচির উপভোগ করতে পারেন


খাবারদাবার


সুনামগঞ্জে প্রচুর রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে খাবার বেশ সস্তাকিন্তু তাহিরপুরে রেস্টুরেন্ট ফ্যাসিলিটিজ খুব একটা উন্নত মানের নয়কেউ যদি রাতে নৌকায় থাকার ব্যবস্থা করেন, তাহলে তাহিরপুর বাজার থেকে খাবার নিয়ে নিতে পারেনএছাড়া যে নৌকায় থাকার ব্যবস্থা করেছেন, চাইলে সেখানেও রান্নাবান্নার ব্যবস্থা করতে পারেনহাতের কাছে প্রয়োজনীয় সবকিছু থাকলে বারবিকিউয়ের আয়োজন করলে মন্দ হয় নাএর জন্য অবশ্য মাঝির সঙ্গে আগে থেকেই কথা বলে নেয়া ভালোহাওড়ের আশপাশে থাকা মানুষও বেশ বন্ধুসুলভচাইলে খাবারের সংস্থান করতে তাদের সাহায্য নিতে পারেন


টিপস

* যদি সাঁতার জানা না থাকে, তবে লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে নিন
* রাতের বেলায় হাওড়ে থাকার পরিকল্পনা থাকলে আগে থেকেই যথাযথ প্রস্তুতি নিনটর্চ লাইট, দেয়াশলাইয়ের পাশাপাশি মশার কামড় থেকে বাঁচতে ওডোমোস সঙ্গে নিন
* দরকষাকষির সময় সাবধান
* রোদ কিংবা বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে ছাতা সঙ্গে রাখুন
* ফার্স্ট এইড কিটস সঙ্গে রাখুন
* ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো সংরক্ষণে প্লাস্টিকের ব্যাগ সঙ্গে নিন
* ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফির জন্য টাঙ্গুয়ার হাওড়ের চেয়ে ভালো জায়গা সত্যিই খুঁজে পাওয়া দায়
* কোনোমতেই পাখি শিকার করবেন না
* হাওড়ের পানিতে কোনো বর্জ্য কিংবা পলিথিন ফেলবেন না

Comments