বৃদ্ধাশ্রম‬

SaiF UddiN


.
সেলিমঃ মৌমিতা প্লিজ আস্তে বলো। মা সব শুনবে।
মৌমিতাঃ শুনার জন্যই তো বলছি। হয় ঐ মহিলা থাকবে না হয় আমি?
সেলিমঃ সে কি মৌমিতা। মা'কে তুমি এসব কেন বলছো?
মৌমিতাঃ একটু বাহিরে বের হতে পারি না, বান্ধবীদের সাথে ফোনে কথা বলতে পারি না। একটু রাত করে ফিরলে কত কৈফিয়ৎ। আমি আর সহ্য করতে পারব না।
সেলিমঃ আচ্ছা আমি ব্যাপারটা দেখছি।
প্রবাসী সেলিম কানাডায় থাকে। মৌমিতা তার বিবাহিতা স্ত্রী। তাদের দাম্পত্য জীবন শুরু হয় ২বছর আগে। মৌমিতা বার বার সেলিমের মা'কে নিয়ে কথা বলে।
মৌমিতা তো ঠিকই বলে। বন্ধু বান্ধব তো থাকবে। আর একটা মানুষ তো বেড়াতে যাবেই। তাই বলে এত কিছু?
না না। মা'কে এটা নিয়ে বলতে হবে। দেশে আসলে এই অবস্হা। দুর ভাল লাগে না।
সেলিমঃ মা! আসবো?
মাঃ সেলিম আয় বাবা। মায়ের কাছে আসতে পারমিশন লাগে?
সেলিমঃ মা একটা কথা বলবো? তুমি কোথাও থেকে বেড়িয়ে এসো। ঘরে থাকতে থাকতে কেমন যেন বাহিরের পরিবেশের সাথে অচেনা হয়ে গেছো তুমি।
মাঃ আমিও তা ই ভাবছি বাবা সেলিম। তোদের খুব অসুবিধা হচ্ছে তাই না?
সেলিমঃ আমি তোমাকে মাসে মাসে টাকা পাঠাবো। তুমি অন্য কোথাও গিয়ে থাকো।
মাঃ তুই এখনও ছোট রয়ে গেলি রে। মায়ের কষ্ট ঠিক আগের মতই বুঝিস। তোর মনে আছে একদিন গভীর রাতে আম খাওয়ার জন্য বায়না ধরেছিলি। তোর বাবা দ্রুত গিয়ে আম এনেছিলো। আর সে আম কাটতে গিয়ে ঘুমের ঘুরে আমি আমার হাত কেটে ফেলি। আর তোর সে কি কান্না। কত যত্নে আমার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছিলি সেদিন।
সেলিমঃ মা তুমি এখনও আগের যুগেই
রয়ে গেলে।
মাঃ হ্যা রে। তাই তো আজও তোর কাছে পড়ে আছি। মনে আছে? তোর একদিন খুব জ্বর। কোনো কথা বলতে পারছিস না।
তোকে জড়িয়ে ধরে সারা রাত ছিলাম। রাত যত বাড়তে লাগল। তোর প্রতি আমার ভালবাসা ততই নিবিড় হতে লাগল। একটু ঘুমায় নি সেদিন। কত কষ্ট পেয়েছিস তুই।
সেলিমঃ মা বাদ দাও ওসব। অনেক রাত
হয়েছে ঘুমিয়ে পড়।
সেলিম যাওয়ার পর মিসেস সুলতানা'র
চোখে বেয়ে অশ্রুর ঢল। তিনি অতীত মনে করার চেষ্টা করলেন। সেলিম'কে নিয়ে কত স্মৃতি আজ দুয়ারে এসে ভিড় জামাচ্ছে। সেলিম আসবে খবর শুনে সিফাত সেকি খুশি। বাসায় একটি ছোট করে পার্টিও দেয়। তারপর ঝগড়া লাগতো ছেলে হবে না মেয়ে হবে। সুলতানা বলত ছেলে হবে আর সিফাত বলত মেয়ে হবে। এই নিয়ে তুমুল কান্ড। অনেকদিন কথা পর্যন্ত বলে নি সুলতানা। শেষমেস সুলতানা'র কথাই সত্যি হল। ছেলেই হল। সুলতানা সিফাতের নামের সাথে মিল করেই নাম ঠিক করল সেলিম। এবং বাড়ির নামও রাখা হল "সেলিমের নীড়"। তার প্রিয় রং আকাশী। তাই আকাশী রঙয়েই করল বাড়িতে। সবকিছু সেলিমের পছন্দমত।
সেলিমের বাবা মারা গেল রোড এক্সিড়েন্টে। সেথেকে সেলিম'কে সম্বল করেই বেছে থাকা মিসেস সুলতানার।
ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গেল খেয়াল নেই।
খুব ভোরে উঠল সেলিম। উঠে তার মায়ের কাপড় চোপড় গোছাতে লাগল।
সেলিমঃ চলো মা তাড়াতাড়ি। দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি আজ কানাড়া চলে যাবো।
মাঃ বাবা একটু মাথাটা এদিকে আন।
কপালে চুমু একে দিয়ে হাটা শুরু করলেন গাড়ির দিকে।
সেলিম তার মা'কে এমন একটি জায়গায়
নিয়ে এল যেখানে সবাই বৃদ্ধ মহিলা। কেউ খেলা করছেন, কেউ গল্প করছেন।
সেলিম দশবছরের টাকা এককালিন পরিশোধ করে চলে গেল।
মিসেস সুলতানা অনেকক্ষন তাকিয়ে ছিল সেলিমের দিকে। একবার যদি ফিরে তাকায়। একবার যদি মা বলে ডেকে তাকে জড়িয়ে ধরে।
না, সেলিম গাড়িতে উঠে বউকে নিয়ে চলে গেল।
১ বছর পর…
কি ব্যাপার মৌমিতার মোবাইল দুদিন ধরে বন্ধ। কোনো সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।
ব্যাপারটা কি? এমন তো কিছু হয় নি? মা কি আবার ফিরে এসেছে? না এই মহিলাকে নিয়ে পারা যাবে না। দ্রুত দেশে যেতে হবে।
সেলিম চলে এল দেশে। বাসার দরজা খুলা। মৌমিতার ঘরও খুলা। আলমারি খালি। হঠাৎ বিছানায় একটি কাগজ চোখে পড়ল সেলিমের। ডিভোর্স পেপার সাথে মৌমিতার স্বাক্ষর।
একটি চিরকুট। এলোমেলো হয়ে গেল
মুহুর্তে সব সেলিমের। মৌমিতা তার সাথে প্রতারনা করল। সাথে সাথে বিছানায় বসে পড়ল সেলিম। কান্নার অঝর ধারা গাল
বেয়ে নামতে লাগল। মায়ের কথা মনে পড়ল। মা তো ঠিকই করত। মা'কে কষ্ট দিয়ে সে ভুল করেছে। দ্রুত গেল বৃদ্ধাশ্রমে।
সেলিমঃ আমার মা কোথায়?
কেয়ারটেকারঃ কি বলছেন এসব? কত করে বললাম লাশ টা নিয়ে যান। আপনারা তো কেউ এলেন না। তাই আমরা আমাদের কবরস্হানে কবর দিছি। ঐ যে ঐটা।
সেলিমঃ বসে পড়ল। মা তুমি আমায় ছেড়ে চলে গেলে? আমায় রেখে গেলে। কেন মা কেন। আমায় ক্ষমা করে দাও মা। ক্ষমা করে দাও। সেলিম কবর জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। রাত হয়ে গেল। যত রাত বাড়ছে ভালবাসা ততই নিবিড় হচ্ছে।
পুনশ্চঃ পিতামাতার স্থান কখনো বৃদ্ধাশ্রম হতে পারে না।

Comments