‘কোটা পদ্ধতি এই মুহূর্তে তুলে দেওয়া উচিত’ ??????

SaiF UddiN

পুরষ্কার হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা দেয়ার কোন বিধান সংবিধানে নাই'- আকবর আলী খান
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ বলা হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা যেহেতু কোটার সুবিধা পাচ্ছেন, তাই কোটাপ্রথা বাতিল করলে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা হবে। অাপনি কী মনে করেন?
ড. অাকবর অালি খানঃ এটা সম্মান-অসম্মানের প্রশ্ন না। কোটা সম্পর্কে সংবিধানে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। অণগ্রসর জনগোষ্ঠীকে সামনে নিয়ে অাসার জন্য কোটা করা যেতে পারে। সেই চিন্তা থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা পদ্ধতি প্রচলন করা হয়। কারণ, যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছিল তখন মুক্তিযোদ্ধারা পড়ালেখা করতে পারেননি, তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই বিবেচনায় তখন মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন এক ধরণের অনগ্রসর জনগোষ্ঠী। সেজন্য তাদের কোটা সুবিধা দেওয়া হয়েছিল।
মুক্তিযোদ্ধাদেরকে পুরষ্কার হিসেবে কোটা দেওয়ার কোনো বিধান কিন্তু সংবিধানে নাই। বর্তমান সংবিধানে কোনো জনগোষ্ঠীকে পুরষ্কৃত করার কোনো বিধান নাই। বর্তমানে অামরা যদি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা সুবিধা রাখতে চাই, তাহলে অনগ্রসর জনগোষ্ঠী হিসেবে রাখতে হবে। যারা যুদ্ধাহত হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, অায়ের কোনো ভালো উৎস নাই, যারা সরকারের সাহায্যের উপর নির্ভরশীল- এ ধরণের মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের জন্য কোটা ব্যবস্থা চালু রাখা যেতে পারে। কিন্তু এর বাইরে যারা অাছেন, যেসব মুক্তিযোদ্ধার অবস্থা স্বচ্ছল, তাদেরকে কোটা সুবিধা দিলে তা পুরস্কার হিসেবে সামিল হবে।(১)
কোটার সংস্কার বিষয়ে লাখ লাখ বাংলাদেশী যুবকের আবেদন, আন্দোলন ও নির্যাতন ভোগা সত্ত্বেও, মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে যুক্তিপূর্ণ আবেদন থাকা সত্ত্বেও, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোটা রেখে দেয়ার বক্তব্য খুবই হতাশাজনক।প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ,
"সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিদের জন্য যে ৩০ শতাংশ কোটা আছে, তা বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের কারণে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, এ কথাটা ভুললে চলবে না। কাজেই তাঁদেরকে আমাদের সম্মান দিতেই হবে। তাঁদের ছেলে, মেয়ে, নাতি, পুতি পর্যন্ত যাতে চাকরি পায়, সে জন্য কোটার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোটা যদি পূরণ না হয়, তাহলে শূন্য পদে সাধারণ চাকরিপ্রার্থী মেধাবীদের নিয়োগ দিতে কোটার বিষয়টি শিথিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, যদি মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন না করতেন, তাহলে কেউ আমরা কোনো চাকরি পেতাম না।’(২)
কোটার ভুক্তভোগী দলমত নির্বিশেষে সবাই।এর সুবিধাভোগীরা সমাজের নয়া 'ব্রাম্মণ'।যেহেতু জন্মের মাধ্যমেই এই সুবিধা নির্ধারিত। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা কি পাকিস্তানী 'আশরাফবাদী' উন্নাসিকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে 'নয়া ব্রাম্মণ্যবাদ' প্রতিষ্ঠার জন্য লড়েছিলেন? এই বিষয়ে সঠিক সীদ্ধান্ত নিতে পারবে যারা, তারাই আগামী নির্বাচনে যুবকদের ভোট পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
নোট:
(১) একুশে টেলিভিশন অনলাইন, ‘কোটা পদ্ধতি এই মুহূর্তে তুলে দেওয়া উচিত’, ১৫ মার্চ ২০১৮
(২) প্রথম আলো,' মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবে: প্রধানমন্ত্রী',২১ মার্চ ২০১৮, 

Comments