লেখা: SAIF UDDIN
চেনা পথের রাস্তাগুলো আজকাল ভীষণ অচেনা লাগে। কেউ একজন পথচলার নিত্য সঙ্গী ছিল বলেই কিনা জানি না পথটা এক সময় ভীষণ ভালো লাগত।
এরপর অনেকগুলো বছর পার হয়ে গেল এপথে যাওয়া হয় না। সঙ্গীটাও নেই। পাড়ি জমিয়েছে অচেনা জগতে।
চেনা পথের রাস্তাগুলো আজকাল ভীষণ অচেনা লাগে। কেউ একজন পথচলার নিত্য সঙ্গী ছিল বলেই কিনা জানি না পথটা এক সময় ভীষণ ভালো লাগত।
এরপর অনেকগুলো বছর পার হয়ে গেল এপথে যাওয়া হয় না। সঙ্গীটাও নেই। পাড়ি জমিয়েছে অচেনা জগতে।
আজকাল নিঃসঙ্গতা খুব করে পেয়ে বসেছে। বাড়ির পেছন দিকের কাঁঠালিচাঁপা গাছটির ছায়ায় আনমনা হয়ে বসে থাকি আর পুরনো স্মৃতিগুলো মনে করি।
একসময় দুজন এই গাছের ছায়ায় বসে জীবনের অনেক না-বলা কথা শেয়ার করেছি। সুখ-দুঃখের স্মৃতিবিজড়িত সময়গুলো বেশ কেটে যাচ্ছিল।
এরপর হঠাৎ করেই একদিন খবর পেলাম সে তার পরিবারের সঙ্গে চলে যাচ্ছে শহরে। চেনা পথ, মাটির গন্ধ, কাঁঠালিচাঁপা গাছের ছায়া—এতসব ছেড়ে কী করে সে যেতে পারে শহর নামে স্বীকৃত ব্যস্ত নগরে! ভাবতেই ভেতরটা দুমড়েমুছড়ে যাচ্ছিল।
এক দৌড়ে চলে গেলাম ওদের বাড়িতে। গিয়ে দেখি যাওয়ার পুরো প্রস্তুতি প্রায় শেষ। আচমকা আমাকে দেখে দৌড়ে এসে হাত ধরে বাড়ির পেছনটায় নিয়ে গিয়ে বলল, শোনো সোনা, আমি চলে যাচ্ছি এ গ্রাম ছেড়ে, মাটির গন্ধ ছেড়ে, তোমার চেনা সেই পথ ছেড়ে, আমার প্রিয় সেই কাঁঠালিচাঁপা গাছ ছেড়ে। দুঃখ কোরো না প্লীজ, পরিস্থিতির শিকার আমি। বাবা সরকারি চাকুরীজীবী। আজ এখানে তো কাল সেখানে। তাই বাধ্য হয়েই যেতে হচ্ছে। আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম থেকে যেতে, কিন্তু বাবা-মা কেউই ছাড়ল না। বলল, শহরের বিখ্যাত স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবে। এই অজপাড়াগাঁয়ের অখ্যাত স্কুলে থেকে নাকি কিছুই করা সম্ভব না।
জীবনে ভালো কিছু করতে হলে নাকি ভালো স্কুলে পড়তে হয়—তাদের এই ভ্রান্ত বিশ্বাস কীভাবে ভাঙাই বলো? ভালো কিছু করতে ভালো স্কুল লাগে না; লাগে সৎ সাহস, উদ্যমী মনোভাব এবং দৃঢ় মনোবল।
বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ছেড়ে কখনোই যেতে চাইনি। আমাদের ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তবে একদিন সত্যি সত্যিই আবার ফিরে আসব। তুমি অপেক্ষা কোরো। আমি আসব, আবার আসব; তুমি, এই চেনা পথ, এই মাটি, কাঁঠালিচাঁপা গাছ—এতসব ভুলে থাকতে পারব? কখনোই না। আসব আমি। ভালো থেকো। শরীরের প্রতি যত্ন নিয়ো।
আসি...
জীবনে ভালো কিছু করতে হলে নাকি ভালো স্কুলে পড়তে হয়—তাদের এই ভ্রান্ত বিশ্বাস কীভাবে ভাঙাই বলো? ভালো কিছু করতে ভালো স্কুল লাগে না; লাগে সৎ সাহস, উদ্যমী মনোভাব এবং দৃঢ় মনোবল।
বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ছেড়ে কখনোই যেতে চাইনি। আমাদের ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তবে একদিন সত্যি সত্যিই আবার ফিরে আসব। তুমি অপেক্ষা কোরো। আমি আসব, আবার আসব; তুমি, এই চেনা পথ, এই মাটি, কাঁঠালিচাঁপা গাছ—এতসব ভুলে থাকতে পারব? কখনোই না। আসব আমি। ভালো থেকো। শরীরের প্রতি যত্ন নিয়ো।
আসি...
সে চলে গেল। আমি নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। যতক্ষণ দেখা গেল, তাকিয়েই রইলাম। দৃষ্টিসীমা ছাড়তেই বাড়ি চলে এলাম।
ওর চলে যাওয়ায় সময়গুলো ভালো যাচ্ছিল না। সারাদিন শুধু ওকে নিয়ে চিন্তা করেই কাটিয়ে দিতাম। খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো করতাম না।
মা জানতে চাইতেন, কী হয়েছে বাবা? এভাবে সারাদিন আনমনা হয়ে বসে থাকিস কেন? ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করিস না। কেমন শুকিয়ে যাচ্ছিস। মনে হয় কী যেন ভাবিস। এত কী ভাবিস?
আমি কিছু বলি না। কী বলব? মাকে এসব বলা যায়? শুধু নিজে নিজেই:
ছটফট করি আমি পাই না থৈ/এই কথা কারে যে কই/আমি নই কোনো রুগী তবু কী অসুখে ভুগি/কে বলে দেবে কী তার মানে/কে জানে হায় কোন আগুনে/পুড়ি গো আমি এই ফাগুনে...!
মা জানতে চাইতেন, কী হয়েছে বাবা? এভাবে সারাদিন আনমনা হয়ে বসে থাকিস কেন? ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করিস না। কেমন শুকিয়ে যাচ্ছিস। মনে হয় কী যেন ভাবিস। এত কী ভাবিস?
আমি কিছু বলি না। কী বলব? মাকে এসব বলা যায়? শুধু নিজে নিজেই:
ছটফট করি আমি পাই না থৈ/এই কথা কারে যে কই/আমি নই কোনো রুগী তবু কী অসুখে ভুগি/কে বলে দেবে কী তার মানে/কে জানে হায় কোন আগুনে/পুড়ি গো আমি এই ফাগুনে...!
এরপর অনেকগুলো বছর চলে যায়। হঠাৎ করে একদিন খবর পেলাম সে নেই। গাড়ি অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছে। খবর শুনেই অজ্ঞান হয়ে পড়লাম। ডাক্তারের চেকআপে এবং সবার দেখাশোনায় তিন দিন পর আমার জ্ঞান ফেরে।
সেই থেকে প্রতিটা ক্ষণ ওর পথচেয়ে বসে থাকি। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে সে নেই।
আমি আজও বিশ্বাস করি সে বেঁচে আছে। তাই তো রোজ ওর প্রিয় জায়গাগুলোতে বসে থাকি; কিন্তু সে আর আসে না।
তাই আজ সেই চিরচেনা রাস্তা, প্রিয় কাঁঠালিচাঁপা গাছ—এত অচেনা লাগে।
আমি আজও বিশ্বাস করি সে বেঁচে আছে। তাই তো রোজ ওর প্রিয় জায়গাগুলোতে বসে থাকি; কিন্তু সে আর আসে না।
তাই আজ সেই চিরচেনা রাস্তা, প্রিয় কাঁঠালিচাঁপা গাছ—এত অচেনা লাগে।
Comments
Post a Comment